ফাইভার নাকি আপওয়ার্ক? কোনটি বেশি সুবিধাজনক?

ফ্রিল্যান্সিং জগতে ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – দুটি বহুল জনপ্রিয় নাম। অসংখ্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মধ্যে নিজেদেরকে সেরার তালিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছে ওয়েবসাইট দুটি। ফাইভার এবং আপওয়ার্ক, উভয় সাইটই অনলাইন মার্কেটপ্লেস হলেও সাইটদুটি ফ্রিল্যান্সার বা গ্রাহকের জন্য অনেকটাই আলাদা অভিজ্ঞতা বহন করে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইভার এবং আপওয়ার্ক, কীরূপ সেবা প্রদান করে এবং কোনটি বেশি সুবিধাজনক তা নিয়ে এই পোস্টে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

ফাইভার ও আপওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে?

আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সারগণ তাদের প্রোফাইলে নিজেদের কাজ, অভিজ্ঞতা এসব তুলে ধরেন। গ্রাহকগণ তাদের যে কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সার আবশ্যক তার বিবরণ দিয়ে মূলত জব পোস্ট করেন। ফ্রিল্যান্সাররা কাজের তালিকা থেকে নিজেদের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে কাজের জন্য প্রপোজাল পাঠান। ক্লায়েন্টরা আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারের তালিকা থেকে তাদের পছন্দের এক বা একাধিকজনকে নির্বাচন করে চুক্তিবদ্ধ হন। আবার গ্রাহকগণ চাইলে কোনো ফ্রিল্যান্সারকে কাজের জন্য ইনভাইটেশনও পাঠাতে পারেন।

খরচ কেমন?

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – উভয় প্ল্যাটফর্মই পেমেন্ট থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ ফি হিসেবে কেটে নেয়, যদিওবা এখানে মূল্য পার্থক্য লক্ষণীয়।

ফাইভার এ ফিল্যান্সার এবং গ্রাহক – উভয়কেই চার্জ করা হয়। যেকোনো গিগ কেনার আগেই এডভান্স হিসেবে উল্লিখিত ফিস প্রদান করতে হয় গ্রাহকদের। ৪০ ডলারের নিন্মমূল্যের সেবাগুলোর জন্য ২ ডলার এবং ৪০ ডলারের চেয়ে বেশি মূল্যের সেবাগুলোর জন্য ৫% হারে ফাইভারকে প্রদান করতে হয়। আবার ফ্রিল্যান্সারগণ এর প্রজেক্টপ্রতি আর্নিং ২০% কেটে নেয় ফাইভার। বাকি ৮০% অর্থ ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে যোগ হয়।  ফাইভার প্রাইসিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্ট দেখুন

এছাড়া ফাইভারে জবে বিড করতে ফ্রিল্যান্সারের কোনো খরচ নেই। তবে আপওয়ার্কে জবে বিড করার জন্য ফ্রিল্যান্সারের টাকা খরচ করে পয়েন্ট কিনতে হয়, যেগুলো কানেক্টস নামে পরিচিত। আপওয়ার্ক কানেক্টস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই পোস্ট দেখুন।

কোনটির কোয়ালিটি কেমন?

আপনি যদি সাইট দুইটিতে ক্রেতা অর্থাৎ গ্রাহক এর ভূমিকা পালন করেন, তবে সাইট দুইটির গুণগত মান সম্পর্কে জানা আপনার জন্য একান্ত জরুরী। ফাইভার এবং আপওয়ার্ক, উভয় মার্কেটপ্লেসেই অসংখ্য দক্ষ ফিল্যান্সার রয়েছেন। তবে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগের ক্ষেত্রে সাইট দুটি কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করে।

অন্যদিকে অভিন্নভাবে সার্চবার এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরি এবং দক্ষতার বিচারে ফিল্যান্সার খোঁজা যাবে আপওয়ার্কেও। একজন ফ্রিল্যান্সার এর ঘন্টামাফিক রেট, আপওয়ার্কে তাদের ব্যায়কৃত সময়, ইত্যাদি তাদের প্রোফাইল থেকে জানা যায়।

রেটিং সিস্টেম

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – উভয় সাইটেই রেটিং সিস্টেম রয়েছে, যাতে একজন গ্রাহক খুব সহজেই তার প্রয়োজনানুগ যোগ্য ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিতে পারে। তাই আপনি যদি একজন গ্রাহক হয়ে থাকেন, তবে কোনো ফ্রিল্যান্সারকে কাজে নিয়োগের পূর্বে রেটিংস দেখে তার পূর্ববর্তী কাজসমূহ সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হন তাহলে আপনার অন্যতম কাজ হবে মার্কেটপ্লেসে নিজের রেটিং ভালো রাখা।

প্রি-স্ক্যানিং সুবিধাসমূহ

ফাইভারে স্কিল টেস্ট দেয়ার সুবিধা আছে। আপনি তাদের অফিসিয়াল এই টেস্টগুলো দিলে বায়াররা আপনার দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। আপওয়ার্কে আগে স্কিল টেস্ট সুবিধা ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।

পেইড মেম্বারশিপ বা বিশেষ একাউন্ট সুবিধা

ফাইভারে কোনো পেইড মেম্বারশিপ নেই। সবাই তাদের একাউন্ট কোনো মাসিক ফি ব্যতীত বিনামূল্যে চালাতে পারেন এবং ফাইভারের সুযোগসুবিধা উপভোগ করতে পারেন। তবে আপনি যদি দক্ষ হন, তাহলে ফাইভার প্রো মেম্বার হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন। তবে ফাইভার প্রো গ্রাহকদের কোনো মাসিক ফি দিতে হয়না।

আপওয়ার্কে বেশ কিছু পেইড মেম্বারশিপ প্ল্যান আছে। এগুলোর আলাদা আলাদা সুবিধাও রয়েছে। যেমন আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার প্লাস মেম্বার হন তাহলে আপনি জবে এপ্লাই করার জন্য ফ্রি কানেক্টস পাবেন, বিড রেঞ্জ দেখতে পাবেন, প্রোফাইলে বাড়তি সুবিধা পাবেন ইত্যাদি। অপর দিকে বায়ারদের জন্যও রয়েছে বেশ কিছু পেইড প্ল্যান

অ্যাপস

আপওয়ার্কের মোবাইল অ্যাপস এবং কম্পিউটার ট্র্যাকিং সফটওয়্যার রয়েছে। ঘন্টা ভিত্তিক জবের জন্য কম্পিউটারে এই আপওয়ার্ক ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করার দরকার হয়। এটা চালু করে কাজ করলে কিছুক্ষণ পরপর বায়ারের কাছে ফ্রিল্যান্সারের কাজের স্ক্রিনশট যায় এবং এটা সময়ের হিসেব রাখে, যে অনুযায়ী বায়ারকে বিল করা হয়।

ফাইভারের কোনো ট্র্যাকিং অ্যাপ নেই। তবে মোবাইল অ্যাপ আছে, যেগুলো দিতে জব সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ এবং মেসেজ আদানপ্রদান করা যায়।

পেমেন্ট নেবো কীভাবে?

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক উভয় সাইট থেকেই পেওনিয়ার কার্ড দেয়া হয়। এই কার্ড দিয়ে আপনি টাকা তুলতে এবং অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়া আপওয়ার্ক এবং ফাইভার থেকে সরাসরি ব্যাংক ট্র্যান্সফারও করতে পারেন। পেমেন্ট মেথড নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

পর্যবেক্ষণ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি

আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হোন কিংবা একজন বায়ার, একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস তাদের প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রমগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে কিনা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করে, তাও দেখা জরুরী।

আপওয়ার্কে বিরোধ নিষ্পত্তি এবং পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে চমৎকার কিছু ব্যবস্থা আছে। আপওয়ার্কে কনট্রাক্ট হোল্ডে রাখা যায়। ফ্রিল্যান্সার এবং গ্রাহকের মধ্যে কোনো ধরনের অসন্তোষের সৃষ্টি হলে রিপোর্ট এর উপর নির্ভর করে আপওয়ার্ক একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করে, যিনি সমস্যা সমধানে কাজ করেন।

নতুনদের জন্য কোনটি সুবিধাজনক?

আমার জানা মতে নতুনদের জন্য ফাইভার এ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা তুলনামূলক সহজ। আপওয়ার্কে বর্তমানে একাউন্ট খোলা এবং এপ্রুভাল পাওয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হয়েছে বলে কমিউনিটি থেকে জানা যাচ্ছে। তবে কাজ জানলে আপওয়ার্কে অনেক উচ্চমূল্য এবং দীর্ঘস্থায়ী জব পাওয়া সম্ভব। আমার মতে উভয় মার্কেটপ্লেসেই একাউন্ট রাখা যেতে পারে।

ফাইভার এবং আপওয়ার্ক – দুইটি শীর্ষ অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এসব মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সার এবং গ্রাহক – উভয়ের জন্যই অফুরন্ত সম্ভবনা নিহিত রয়েছে। এই দুটি সাইট সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী? ফাইভার এবং আপওয়ার্ক এর মধ্যে সেরা কোনটি? কমেন্ট করে আপনার মতামত জানিয়ে দিন।

About the Author: Nazmul Hossain

আমি নাজমুল । আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি চাকরী করছি। আমার চাকরী পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *