১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয় এবং জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয় এবং জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়

আবহাওয়া পরিবর্তনের রেশ এখন প্রবল। সঙ্গে চলছে মৌসুমী সর্দি-কাশি, জ্বরও। আশপাশের অনেকেই হয়ত এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন, যা আপনারও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। হয়ত এরমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন এবং বাড়াচ্ছেন অন্যান্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা।

রোগের তীব্রতা লাগামহীন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে প্রাথমিক দিনগুলোতে ঘরোয়া কিছু করণীয় ও বর্জণীয় বিষয় মেনে চললে ওষুধ ছাড়াই আরোগ্য লাভ হতে পারে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের আলোকে জানানো হল এই বিষয়গুলো সম্পর্কে।

করণীয়

প্রচুর তরল পান: মৌসুমি রোগ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রথম উপদেশই পাবেন প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করার। এর কারণ হল জ্বরের কারণে তাপমাত্রা বাড়লে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতার দিকে যেতে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ এখানে অত্যন্ত জরুরি। কুসুম গরম পানি, ফলের শরবত, ডাবের পানি, চা- যে কোনো তরল খাবারেই বাধা নেই। সর্দি-জ্বর থাকলে প্রতিদিনের লক্ষ্য হবে আট থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করা। আর বেশি তরল পান করলে শরীর থেকে জীবাণু ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যাওয়া সহজ হয়।

১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয় এবং জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

বিশ্রাম: অসুস্থ অবস্থায় যত বেশি সক্রিয় থাকবেন ততই আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে। তাই বিশ্রামে থাকলে তাপমাত্রা কমবে এবং রোগমুক্তি হবে দ্রুত। মৌসুমি সর্দি-কাশি, জ্বর সারাতে ওষুধ সবসময় প্রয়োজন না হলেও জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা নিরাপদ। জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে থাকা, বমি ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

গোসল: কপাল এবং ঘাড়ের পেছনের অংশে জলপট্টি দেওয়া জ্বর কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। পুরোদস্তুর গোসলের পরিবর্তে কুসুম গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মোছাও দ্রুত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া জ্বর নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। অন্যথায় শরীরে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে এবং জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে।

বর্জনীয়

শরীরে ‘অ্যালকোহল’ মালিশ: জ্বর কমানো প্রাচীন এক পদ্ধতি এটি। যা মোটেই নিরাপদ নয়। এই পদ্ধতি জ্বর সারাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অকার্যকর। বরং তা ডেকে আনতে পারে ‘অ্যালকোহল’জনীত বিষক্রিয়া।

বরফ গোসল: বরফ শীতল পানি বা বরফ ভাসা পানিতে গোসল করা হয়ত শরীরের তাপমাত্রা কমাবে, তবে তা ডেকে আনবে কাঁপুনি। ফলাফল, জ্বর আরও বাড়বে। কক্ষ তাপামাত্রার পানিতে গোসল করাই যেখানে মানা, বরফ শীতল পানিতে গোসলের কথা সেখানে অবান্তর।

দ্বিগুন ওষুধ সেবন: দ্রুত জ্বর থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ দ্বিগুন পরিমাণে সেবন কিংবা একই সঙ্গে দুই ধরনের ওষুধ সেবন কোনো উপকারে আসবে না। বরং তা হতে পারে জ্বরের থেকেও বিপদজনক। বেশি ওষুধ খেলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে না। তবে এমনটা করলে শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, বিশেষত, বৃক্কের।

শিশুদের ক্ষেত্রে যখন চিকিৎসক জরুরি

– শিশুর তিন মাস বয়সের মধ্যে জ্বর হলে তাপামাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

– বয়স তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে হলে জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার করে গেলে এবং শিশু ঘুমকাতুরে কিংবা অত্যন্ত কান্নাকাটি করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

– ছয় থেকে ২৪ মাস বয়সি শিশুর ক্ষেত্রে জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে এবং তা একদিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া, বমি এবং ত্বকের ‘র‌্যাশ’ হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে

জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত | ঋতু বদলে ঠান্ডা-জ্বর হলে যা করবেন

প্রকৃতিতে এখন ঋতু বদলের হাওয়া। কখনো গরমে অস্থির, কখনো বা আবার বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে শীত শীত অনুভূতি। এ ঠান্ডা-গরমে অনেকেই সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছেন- ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা যেন লেগেই আছে। তার ওপর করোনার ভয় তো আছেই। বছরের এ সময়ে সর্দি-কাশি কিংবা ঠান্ডা-জ্বর হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এগুলো সবাই যেন অনেকটা সাধারণ জীবনযাপনের অংশ ভেবেই চলে এখন।

কখনো ঠান্ডা-জ্বর হয়নি এমন মানুষ মনে হয় কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। জ্বর কিন্তু আসলে কোনো রোগ নয় বরং এটি বিভিন্ন রোগের একটি উপসর্গ। কারো শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে গেলে তখন তাকে জ্বর বলে। ডেঙ্গু হোক বা করোনা সংক্রমণ, বেশির ভাগ ঠান্ডা-জ্বরই কিন্তু ভাইরাসজনিত।

ঠান্ডা-জ্বর হলে প্রাথমিকভাবে বাসায় থেকেই কিছু বিষয় মেনে চললে সচারচর ৫-৭ দিনের মাঝেই তা সেরে যায়। তবে ঠান্ডা-জ্বরের কারণের ওপর নির্ভর করে এর স্থায়িত্ব, গতি-প্রকৃতি ইত্যাদি কম-বেশি হতে পারে। ঠান্ডা-জ্বর হলে কিছু প্রাথমিক করণীয় রয়েছে, যেমন-

বয়স্কদের ক্ষেত্রে১. জ্বর হওয়ার প্রথম তিন দিন শুধু সঠিক পরিমাণে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খান। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলের পরিবর্তে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না।

২. শুরু থেকেই শরীরে যেন তরলের জোগান ঠিক থাকে, সে জন্য পর্যাপ্ত পানি বা তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। মুখের রুচি বাড়াতে টকজাতীয় ফল খেতে পারেন। তবে ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন- আইসক্রিম, ফ্রিজের পানি, কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি একেবারেই পরিহার করতে হবে।

৩. জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করুন।

৪. যারা ডায়াবেটিস, হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক বা যকৃতের অসুখ কিংবা অন্য জটিল অসুখে ভুগছেন অথবা আগে কখনো ডেঙ্গু হয়েছে, তারা খুব সতর্ক থাকুন।

৫. এসির ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। অনেক সময় এসি থেকে ফ্লু বা নিউমোনিয়া সংক্রমণও হতে পারে।

৬. জ্বরের সাথে বমি, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হচ্ছে কি না ইত্যাদি খেয়াল রাখুন। এরকম হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭. জ্বর এলে বারবার মাথায় জলপট্টি দিন এবং পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে পুরা শরীর স্পঞ্জ করে মুছে ফেলুন। অনেক ক্ষেত্রেই পুরো শরীর ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে একটানা কয়েকবার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং আক্রান্ত রোগী ভালো বোধ করেন। এ কাজে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। খুব বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

৮. জ্বরের সাথে সর্দি-কাশি থাকলে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন ৫-৭ দিন।

৯. ঘরোয়া টোটকা হিসাবে আদা বা কয়েকটি কালোজিরার দানা দিয়ে ঈষদুষ্ণ গরম লাল চা কিংবা তুলসি, কালোমেঘ বা শিউলি পাতার রস হালকা মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।

১০. জ্বরে আক্রান্ত হলে কিছু ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে অন্যদের সঙ্গে বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হাঁচি দেয়ার সময় বা সর্দি মুছতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই ব্যবহৃত সেই রুমাল বা টিস্যু পেপার যেনো অন্য কেউ আর ব্যবহার না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। যেখানে-সেখানে কফ, থুথু বা নাকের শ্লেষ্মা একদম ফেলা যাবে না, এতে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে যেখানে আলো-বাতাস বেশি আসে এমন কক্ষে থাকতে হবে জ্বরের সময়।

শিশুদের ক্ষেত্রে ১. জ্বরের সময় পানিশূন্যতা প্রতিরোধে মায়ের দুধ পান করে এমন শিশুদের ঘনঘন মায়ের দুধ খাওয়ান। এ সময় স্তন্যদানকারী মাকেও সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা ও পর্যাপ্ত খাওয়া-দাওয়া করতে হবে।

২. শিশুকে হালকা গরম পানি দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে গোসল করাতে পারেন। দরকার হলে কিছু সময় পরপর জলপট্টি দিতে পারেন।

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ বা পেডিয়াট্রিক ড্রপ খাওয়ান। ছোট শিশুকে সর্দি-কাশির সিরাপ- যেটার মাঝে জ্বর কমানোর উপাদান আছে, তা সেবন করানো থেকে বিরত থাকুন। এতে জ্বরের ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত সেবন হয়ে যেতে পারে।

৪. শিশুর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখুন (১৮-২৫ ডিগ্রি), জানালা খুলে যথেষ্ট আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন। প্রয়োজনে ফ্যান ছেড়ে দিতে পারেন।

৫. জ্বর হলে শিশুকে অতিরিক্ত কাপড়-চোপড়, কাঁথা বা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে শিশুর মাথা না ঢেকেই রাখা উচিত। কারণ ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা থেকেই তাপ বেশি নির্গত হয়।

৬. ঠান্ডা-জ্বরের সময় খেলাধুলা বা অত্যধিক পরিশ্রম পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হবে।

৭. অতিরিক্ত সর্দি-কাশি হলে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় সিরাপ সেবন করাতে পারেন।

About the Author: Nazmul Hossain

আমি নাজমুল । আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি চাকরী করছি। আমার চাকরী পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *