শিশুর ১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়

শিশুর ১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়।শিশুর হঠাৎ জ্বর, ওমিক্রন হলেও দুশ্চিন্তা নেই

প্রচুর রোগী পাচ্ছি জ্বরের। ঘরে ঘরে শিশুদের এ জ্বর নিয়ে বাবা-মায়েরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত

তারা বলছেন, কোনোভাবেই সন্তানের জ্বর কমছে না। কিন্তু ওষুধ দেওয়ারও যে কিছু নেই, এটা তাদের বোঝানো যাচ্ছে না। অন্য কোন সমস্যা সঙ্গে না থাকলে এ জ্বর যদি করোনাভাইরাসের জন্যও হয়, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

শিশুর ১০২ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়

বাসায় যতটা সম্ভব শিশুর যত্ন নিলে এবং কোনো রকম বিপদচিহ্ন দেখা না দিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আসুন ভাইরাল ফিভার সম্পর্কে জানি।

ভাইরাসজনিত জ্বর হলে কী হয়? 

যে কোন ভাইরাল ফিভারেই প্রচণ্ড জ্বর হয়, সঙ্গে সারা শরীর ব্যথা করে, বমি বমি লাগে, দুর্বল বোধ হয়। ডেঙ্গু, করোনাভাইরাসেও তেমন হয়। তবে ব্যথাটা মাত্রায় বেশি হতে পারে। সাধারণত সারা গায়েই ব্যথা হচ্ছে এমন মনে হয়, যেটা অনেক শিশুই বলতে পারে না।

ডেঙ্গুজ্বর

ডেঙ্গুজ্বর যদি হয় তাহলে অনেক সময় দুইদিন পর জ্বর চলে গিয়ে সারা শরীর লাল হয়ে যায়, অনেক সময় চুলকানি শুরু হয়। এ সময়টাই ক্রিটিকাল পিরিয়ড, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে ও দাঁতে মাড়ি বা কাশি-বমির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এজন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

তবে সব ডেঙ্গু জ্বরেই এমন হবে তা নয়। অনেক সময় জ্বর পাঁচ-ছয় দিনও থাকে, জ্বর থাকা অবস্থাতেই শিশুর গায়ে র‍্যাশ, চুলকানি, তীব্র পেটব্যথা ও রক্তক্ষরণ নিয়ে আসতে পারে। রোগীর খিচুনি বা অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে, এমন শিশুও আমরা হাসপাতালে পাই।

করোনাভাইরাস জ্বর

কোনো কারণ ছাড়াই আকাশ-পাতাল জ্বর যাকে বলে, ওষুধেও পুরোপুরি কমে না। সঙ্গে কোনো শিশুর পাতলা পায়খানা থাকতে পারে, সহজে কমে না এমন। কিছু শিশুর শুধু কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বেশিরভাগ জ্বরেই শিশু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়, তাই যতটা সম্ভব পানি ও তরল খাবার দিয়ে পানিশূন্যতা ঠেকাতে হয়।

কোন জটিলতা না থাকলে সাধারণত ডেঙ্গু বা করোনাভাইরাসের আলাদা চিকিৎসা নেই। কাজেই প্রচণ্ড জ্বর হলেই বা জ্বর না কমলে দুই-এক দিনে আমরা শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন, ইনজেকশন দেওয়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বো, তা কিন্তু ঠিক নয়।

তাহলে জ্বর হলে কী করবেন?

জ্বর হলে শিশুকে গা মুছে দেবেন, একটু একটু করে প্রচুর পানি, তরল, ডাবের পানি, স্যুপ, শরবত বেশি করে খাওয়াবেন। বিশ্রামে রাখার চেষ্টা করবেন, দৌড়ঝাপ যেন না করে খেয়াল রাখতে হবে। ভেজা গামছা বা পাতলা কাপড় দিয়ে গা বারবার মুছে দেবেন। স্বাভাবিক গোছল বন্ধ করবেন না, প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোছল করাবেন।

জ্বর যদি একশ বা তার বেশি হয় তাহলে প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াবেন ছয় ঘণ্টা পর পর, তবে অপ্রয়োজনে বা জ্বর না মেপেই ওষুধ খাওয়াবেন না। ভুলেও অপ্রয়োজনে প্যারাসিটামল বা ক্লোফেনাক জাতীয় বা অন্য কোন নন-স্টেরিওডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেম্যাটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) জাতীয় ব্যথার ঔষধ, আবারও বলছি, ভুলেও খাওয়াবেন না। এগুলো শরীরের প্লেটলেটের উপর বিরূপ প্রভাব (প্লেটলেট এগ্রিগেশনে বাধা দেওয়া) ফেলে এবং হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হতে পারে। কিডনি বিকল করে দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

জ্বর বেশি হলে গা মুছিয়ে ঠান্ডা রাখতে হবে। কারণ, জ্বর অনেকসময় প্যারাসিটামল দেওয়ার পরও খুব বেশি কমে না। প্রয়োজন হলে বা জ্বর খুব বেশি হলে (১০২- ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট – ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট), সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারেন। তবে, একটা সাপোজিটরি ব্যবহারের ৮ ঘণ্টার মধ্যে আর নতুন করে সাপোজিটরি দিতে পারবেন না। সারাদিনে তিনবারের বেশি সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে না।

বেশিরভাগ ভাইরাল ফিভারই ৩-৫ দিনের আগে কমতে শুরু করে না এবং ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। জ্বরের সঙ্গে অন্যকোন সমস্যা না থাকলে, সাধারণ জ্বর ও ডেঙ্গুর একই চিকিৎসা- গা মুছে দেওয়া, গোসল দেওয়া, প্রচুর পানি বা তরল খাবার দেওয়া, প্যারাসিটামল জ্বরের মাত্রা অনুযায়ী ও বিশ্রাম।

সব ডেঙ্গু বা করোনাভাইরাস জ্বরেই জটিলতা দেখা যায় না। মুখে প্রচুর পরিমানে পানি ও তরল খাবার খেতে পারলে, আমরা শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করি না। বাসাতেই চিকিৎসা দিতে বলি। তবে শিশু মুখে খেতে না পারলে বা প্রেসার কম থাকলে, শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসে নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে, খিচুনি হলে শিশুকে অবজারভেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।

মনে রাখতে হবে- জ্বর অবস্থায় শিশুরা এমনিতেও খেতে চায় না। এজন্য খাবার নিয়ে জোরাজুরি না করে যতটা সম্ভব পানি ও তরল খাবার, প্রয়োজনে অল্প করে বারবার খাওয়াবেন। শিশু কিছুই খায় না, এটা একটি জাতীয় সমস্যা। দয়া করে খেতে চায় না আর খেতে পারে না, এই দুটো জিনিস গুলিয়ে ফেলবেন না। ইচ্ছে করে খেতে না চাওয়া শিশুকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে খাওয়ানো যায়। খেতে পারছে না যে শিশুটা তারই চিকিৎসা বেশি জরুরি।

অনেকে শিশুকে স্যালাইন দেওয়ার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। শিশুকে কতটুকু স্যালাইন দেওয়া হবে তার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে, এগুলো কিছু শারীরিক লক্ষণ ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের নির্ভর করে। কাজেই, অযথা যেমন রক্ত পরীক্ষা করা হয় না, তেমনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্যালাইন দিলে হার্ট-কিডনির উপর চাপ পড়ারও ভয় থাকে। সবক্ষেত্রে, আপনার গুগলবিদ্যা কাজে লাগাতে যাবেন না, কিছু জিনিস চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতার উপর ছেড়ে দিতে হবে।

অযথা আতঙ্কিত না হয়ে বরং জ্বরের এই সিজনে যেন মশা বংশবৃদ্ধি না করতে পারে এ ব্যবস্থা নিন। বাসার ভেতর ও আশপাশে পরিষ্কার পানি জমে এমন কিছু রাখবেন না। গাছের গোড়া, টব, এসি, বালতির পানি ঢেকে বা পানিশূন্য রাখুন। মাস্ক পড়ুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, বারবার হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন এবং অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করুন।

লেখক পরিচিতি: শিশু বিশেষজ্ঞ, বহির্বিভাগ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল

About the Author: Nazmul Hossain

আমি নাজমুল । আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি চাকরী করছি। আমার চাকরী পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *