ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি, স্বরধ্বনি,ও ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ

ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি, স্বরধ্বনি,ও ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ

ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি, স্বরধ্বনি,ও ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ

ধ্বনি কাকে বলে?

কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশ্লেষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক পওয়া যায় সেগুলোকে ধ্বনি বলে।

ধ্বনির প্রকারভেদ/ শ্রেণীবিভাগ

✿ ধ্বনির প্রকারভেদ:
ধ্বনি দুই প্রকার। যথা:
ক. স্বরধ্বনি
খ. ব্যঞ্জনধ্বনি


✿ স্বরধ্বনি:
যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস কাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোন প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি।
বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি ১১ টি।
✿ স্বরধ্বনির প্রকারভেদ:


স্বরধ্বনি দুই ভাগে বিভক্ত। যথা:
ক. মৌলিক স্বর
খ. যৌগিক স্বর


✿ মৌলিক স্বর:
যে স্বরধ্বনি একক ভাবে উচ্চারিত হয় তাকে মৌলিক স্বর বলে।
বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বর ৯ টি। যথা: অ, অা, ই, ঈ উ, ঊ, ঋ, এ, ও।


✿ যৌগিক স্বর:
পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয় এ রূপে এক সঙ্গে উচ্চারিত দুটো স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা সান্ধ্যক্ষর বা দ্বিস্বর বলা হয়।
বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বর ২৫ টি।


✿ ব্যঞ্জন ধ্বনি:
যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি।
বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনি ৩৯ টি।

স্বর ধ্বনি কাকে বলে?

স্বরধ্বনিঃ যেসকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোন প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি।বাংলা স্বরধ্বনি ১১ টি। যেমন – অ,আ,ই,ঈ ইত্যাদি।

স্পর্শ ব্যঞ্জন বা স্পর্শধ্বনি:
ক থেকে ম পর্যন্ত প্রথম ২৫ টি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি ধ্বনিকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি।
ক-ম পর্যন্ত ২৫ টি ধ্বনিকে পাঁচটি বর্গ বা গুচ্ছে বিভক্ত করা হয়েছে যেখানে প্রতিটি বর্গে পাঁচটি করে ধ্বনি অাছে।


◆ ক-বর্গীয় ধ্বনি: ক, খ, গ, ঘ, ঙ এ পাঁচটি ধ্বনিকে ক-বর্গীয় ধ্বনি বলে। ক-বর্গীয় ধ্বনি জিহবার গোড়ার দিকে নরম তালুর পশ্চাৎ ভাগ স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। ক-বর্গীয় ধ্বনিকে জিহবামুলীয় বা কণ্ঠ্য ধ্বনি বলে।


◆ চ-বর্গীয় ধ্বনি: চ, ছ, জ, ঝ, ঞ এ পাঁচটি ধ্বনিকে চ-বর্গীয় ধ্বনি বলে। চ-বর্গীয় ধ্বনি জিহাবার অগ্রভাগ চ্যাপটা ভাবে তালুর সম্মুখ ভাগের সঙ্গে সংঘর্ষ করে উচ্চারিত হয়। এদের তালব্য স্পর্শধ্বনিও বলে।


◆ ট-বর্গীয় ধ্বনি: ট, ঠ, ড, ঢ, ণ এ পাঁচটি ধ্বনিকে একত্রে ট-বর্গীয় ধ্বনি বলে। ট-বর্গীয় ধ্বনি জিহবার অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশকে স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। ট-বর্গীয় ধ্বনিকে দন্তমূলীয় প্রতিবেষ্টিত ধ্বনি বা মূর্ধন্য ধ্বনিও বলা হয়।
◆ ত-বর্গীয় ধ্বনি: ত, থ, দ, ধ, ন এ পাঁচটি ধ্বনিকে একত্রে ত-বর্গীয় ধ্বনি বলে। ত-বর্গীয় ধ্বনি জিহবা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং অগ্রভাগ ওপরের দাঁতের পাটির গোড়ার দিকে স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। ত-বর্গীয় ধ্বনিকে দন্ত্য ধ্বনিও বলা হয়।
◆ প-বর্গীয় ধ্বনি: প, ফ, ব, ভ, ম এ পাঁচটি ধ্বনিকে একত্রে প-বর্গীয় ধ্বনি বলে। প-বর্গীয় ধ্বনি ওষ্ঠর সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে উচ্চারিত হয়। প-বর্গীয় ধ্বনিকে ওষ্ঠ্য ধ্বনিও বলা হয়।
● উচ্চারণের ভিত্তিতে স্পর্শধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ বিভক্ত।
ক. অঘোষধ্বনি
খ. ঘোষধ্বনি
◆ অঘোষধ্বনি: আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে।


অঘোষধ্বনি ধ্বনিগুলো হলো: ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ।


◆ ঘোষধ্বনি: যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে।
ঘোষধ্বনিগুলো হলো : গ, ঘ, ঙ, জ, ঝ, ঞ, ড, ঢ, ণ, দ, ধ, ন, ব, ভ, ম।
● স্থায়ীকালের ভিত্তিতে স্পর্শধ্বনিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. অল্পপ্রাণ ধ্বনি
খ. মহাপ্রাণ ধ্বনি


◆ অল্পপ্রাণ ধ্বনি: কোন কোন ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না সে ধ্বনিগুলোকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে।
অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলো হলো : ক, গ, চ, জ, ট, ড, ত, দ, প, ব।
◆ মহাপ্রাণ ধ্বনি : কোন কোন ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয়, সে ধ্বনিগুলোকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে।
মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলো হলো :খ, ঘ, ছ, ঝ, ঠ, ঢ, থ, ধ, ফ, ভ।
● নাসিক্য ধ্বনি: যেসব ধ্বনি উচ্চারণে নাক ও মুখ দিয়ে কিংবা কেবল নাক দিয়ে ফুসফুস তাড়িত বায়ু বের হয়ে উচ্চারিত হয় সে ধ্বনিগুলোকে নাসিক্য ধ্বনি বলে।
নাসিক্য ধ্বনিগুলো হলো : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম।


● উষ্মধ্বনি : যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় অামরা শ্বাস যতক্ষণ খুশি রাখতে পারি, সে ধ্বনিগুলোকে উষ্মধ্বনি বলে।
উষ্মধ্বনিগুলো হলো শ, ষ, স, হ।


● অস্তঃস্থ ধ্বনি: যে সব ধ্বনির উচ্চারণ স্পর্শ ও উষ্মধ্বনির মাঝামাঝি তাদেরকে অস্তঃস্থ ধ্বনি বলে।
অন্তঃস্থ ধ্বনিগুলো হলো: য, র, ল, ব।

● তালব্য ধ্বনি: যে ধ্বনি সাধারণত সম্মুখ তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় তাকে তালব্য ধ্বনি বলে।
তালব্য ধ্বনি হলো: য।
● তাড়জাতধ্বনি : যে ধ্বনি জিহবার অগ্রভাগকে কম্পিত করে এবং তদ্বারা দন্তমূলকে একাধিক বার দ্রুত অাঘাত করে উচ্চারিত হয় তাকে 0তাড়নজাতধ্বনি বলে।
তাড়নজাত ধ্বনি হলো : র।


● পার্শ্বিক ধ্বনি : যে ধ্বনি জিহবার অগ্রভাগকে মুখের মাঝামাঝি দন্তমূলে ঠেকিয়ে রেখে জিহবার এক বা দু পাশ দিয়ে মুখবিবর থেকে বায়ু বের হয়ে উচ্চারিত হয় তাকে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।
পার্শ্বিক ধ্বনি হলো : ল।


● উষ্ম ঘোষধ্বনি: যে উষ্মধ্বনি উন্মুক্ত কণ্ঠের মধ্যে দিয়ে বাতাস জোরে নির্গত হয়ে উচ্চারিত হয় তাকে উষ্মঘোষ ধ্বনি বলে।
উষ্মঘোষ ধ্বনি হলো : হ।


● তাড়নজাতধ্বনি: যে ধ্বনি জিহবার অগ্রভাগের তলদেশ দ্বারা ওপরের দন্তমূলে দ্রুত অাঘাত বা তাড়না করে উচ্চারিত হয় তাকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে।
তাড়নজাতধ্বনি গুলো হলো : ড়, ঢ়।


● পরাশ্রয়ী ধ্বনি: যে ধ্বনি অন্য ধ্বনির আশ্রয়ে উপস্থাপিত হয় উচ্চারিত হয় তাকে পরাশ্রূী ধ্বনি বলে।
পরাশ্রয়ী ধ্বনিগুলো হলো: ং, ঃ এবং ঁ ।


● অনুনাসিক ধ্বনি: যে ধ্বনি স্বরধ্বনির অনুনাসিকতার দ্যোতনা করে তাকে অনুনাসিক ধ্বনি বলে।
অনুনাসিক ধ্বনি হলো : ঁ।

স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি প্রকারভেদ গুলো নিচে দেওয়া হলো।
১.স্বরধ্বনি

ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না।

২. ব্যঞ্জনধ্বনি

যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা কণ্ঠ্যে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি।

ধ্বনি পরিবর্তন

ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল। কোন ভাষার পরিবর্তন নিয়ম বা ব্যাকরণ দিয়ে বন্ধ করে দিলে সে ভাষা আস্তে আস্তে মরে যায়। যেমন মরে গেছে সংস্কৃত ভাষা। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণের সুবিধার্থে ভাষার শব্দ, মূলত শব্দের অন্তর্গত ধ্বনি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিবর্তনও কিছু নিয়ম মেনে হয়ে থাকে। ধ্বনির এই পরিবর্তনই মূলত ভাষার পরিবর্তন ঘটায়। ধ্বনির পরিবর্তনের নিয়ম বা প্রক্রিয়াগুলো নিচে দেয়া হলো-

[শব্দ ভাঙার কৌশল : ধ্বনি পরিবর্তন পড়ার আগে একটি কৌশল শিখে নেয়া জরুরি। শব্দের অন্তর্গত ধ্বনিগুলো আলাদা করার বা ভাঙার কৌশল। শব্দ ভাঙার সময় যেই ধ্বনি আগে উচ্চারিত হয়েছে, সেটিকে আগে লিখতে হবে। শব্দে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি পূর্ণাঙ্গ রূপে থাকার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত রূপে কার ও ফলা আকারেও থাকে। শব্দ ভাঙার সময় এগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া একটি স্বরধ্বনির কোন সংক্ষিপ্ত রূপ বা ‘কার’ নেই- ‘অ’-এর। এটি বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে মিলিত রূপে উচ্চারিত হয়, কিন্তু তার কোন প্রতীক বা ‘কার’ আমরা লেখি না। শব্দ ভাঙার সময় এই উহ্য ‘অ’-কেও লিখতে হবে। যেমন- ‘এখানে বসতি গাড়ে এক দঙ্গল পশু’ বাক্যটির সবগুলো শব্দ ভাঙলে হবে-এখানে = এ+খ+আ+ন+এবসতি = ব+অ+স+অ+ত+ইগাড়ে = গ+আ+ড়+এএক = এ+কদঙ্গল = দ+ঙ+গ+অ+লপশু = প+শ+উউল্লেখ্য, যুক্তব্যঞ্জনের ভেতরে কোন উহ্য ‘অ’ থাকে না।]

১. আদি স্বরাগম

শব্দের আদিতে বা শুরচতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলা হয় আদি স্বরাগম। যেমন, ‘স্কুল’ শব্দটি উচ্চারণের সুবিধার জন্য শুরচতে ‘ই’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে ‘ইস্কুল’ হয়ে গেছে। এটি আদি স্বরাগম। এরকম- স্টেশন˃ ইস্টিশন, স্ট্যাবল˃ আস্তাবল, স্পর্ধা˃ আস্পর্ধা

২. মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি

শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে মধ্য স্বরাগম। যেমন, ‘রত্ন’ (র+অ+ত+ন+অ) শব্দের ‘ত’ ও ‘ন’-র মাঝখানে একটি অ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘রতন’। এটি মধ্য স্বরাগম। এরকম- ধর্ম˃ ধরম, স্বপ্ন˃ স্বপন, হর্ষ˃ হরষ, প্রীতি˃ পিরীতি, ক্লিপ˃ কিলিপ, ফিল্ম˃ ফিলিম, মুক্তা˃ মুকুতা, তুর্ক˃ তুরুক, ভ্রু˃ ভুরু, গ্রাম˃ গেরাম, প্রেক˃ পেরেক, স্রেফ˃ সেরেফ, শ্লোক˃ শোলোক, মুরগ˃ মুরোগ˃ মোরোগ,

৩. অন্ত্যস্বরাগম

শব্দের শেষে একটা অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে অন্ত্যস্বরাগম। যেমন, ‘দিশ্’-র সঙ্গে অতিরিক্ত ‘আ’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘দিশা’। এরকম- পোক্ত্˃ পোক্ত, বেঞ্চ˃ বেঞ্চি, সত্য˃ সত্যি

৪. অপিনিহিতি

পরের ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন, ‘আজি (আ+জ+ই) শব্দের ‘ই’ আগে উচ্চারিত হয়ে হয়েছে ‘আইজ’ (আ+ই+জ)। এরকম- সাধু˃ সাউধ, রাখিয়া˃ রাইখ্যা, বাক্য˃ বাইক্য, সত্য˃ সইত্য, চারি˃ চাইর, মারি˃ মাইর

৫. অসমীকরণ

দুটো একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি যুক্ত হলে তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন, ধপ+ধপ˃ (মাঝখানে একটি অতিরিক্ত আ যোগ হয়ে) ধপাধপ। এরকম- টপ+টপ˃ টপাটপ

৬. স্বরসঙ্গতি

দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষার্থে একটির প্রভাবে আরেকটি পরিবর্তিত হলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, ‘দেশি’ (দ+এ+শ+ই)˃ (‘ই’-র প্রভাবে ‘এ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’ হয়ে) ‘দিশি’। স্বরসঙ্গতি ৫ প্রকার-

ক. প্রগত :আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মুলা˃ মুলো, শিকা˃ শিকে, তুলা˃ তুলো

খ.পরাগত : পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, আখো˃ আখুয়া˃ এখো, দেশি˃ দিশি

গ. মধ্যগত : অন্যান্য স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, বিলাতি˃ বিলিতি

ঘ. অন্যোন্য : আগের ও পরের স্বরধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে যদি দুইটি-ই পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মোজা˃ মুজো

ঙ. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি : গিলা˃ গেলা, মিলামিশা˃ মেলামেশা। মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া˃ মুড়ো, চুলা˃ চুলো। উড়ুনি˃ উড়নি, এখুনি˃ এখনি।

৭. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ

শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বলে। যেমন, ‘বসতি’ (ব+অ+স+অ+ত+ই)-র মাঝের ‘অ’ স্বরধ্বনি লোপ পেয়ে হয়েছে ‘বস্তি’ (ব+অ+স+ত+ই)। স্বরলোপ ৩ প্রকার-

ক. আদিস্বরলোপ : শব্দের শুরুর স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন, অলাবু˃ লাবু˃ লাউ, এড়ন্ড˃ (‘এ’ লোপ পেয়ে) রেড়ী, উদ্ধার˃ উধার˃ ধার।

খ. মধ্যস্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরাগম বলে। যেমন, অগুরু˃ অগ্রু, সুবর্ণ˃ স্বর্ণ

গ. অন্ত্যস্বরালোপ : শব্দের শেষের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন, আশা˃ আশ, আজি˃ আজ, চারি˃ চার, সন্ধ্যা˃ সঞ্ঝ্যা˃ সাঁঝ

(স্বরলোপ স্বরাগম-এর বিপরীত প্রক্রিয়া।)

৮. ধ্বনি বিপর্যয়

শব্দের মধ্যবর্তী দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি অদলবদল হলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন, বাক্স˃ বাস্ক, রিক্সা˃ রিস্কা, পিশাচ˃ পিচাশ, লাফ˃ ফাল

৯. সমীভবন

(স্বরসঙ্গতির মতো, কিন্তু ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন হয়) দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’। সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-

ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ

খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ

গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত)

১০. বিষমীভবন

পাশাপাশি একই ব্যঞ্জনধ্বনি দু’বার থাকলে তাদের একটি পরিবর্তিত হলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমন, শরীর˃ শরীল, লাল˃ নাল

১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা

শব্দের কোন ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে, অর্থাৎ দুইবার উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। মূলত জোর দেয়ার জন্য দ্বিত্ব ব্যঞ্জন হয়। যেমন, পাকা˃ পাক্কা, সকাল˃ সক্কাল

১২. ব্যঞ্জন বিকৃতি

কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন ব্যঞ্জনধ্বনি হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন, কবাট˃ কপাট, ধোবা˃ ধোপা, ধাইমা˃ দাইমা

১৩. ব্যঞ্জনচ্যুতি

পাশাপাশি দুটি একই উচ্চারণের ব্যঞ্জন থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে বলে ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন, বউদিদি˃ বউদি, বড় দাদা˃ বড়দা,

১৪. অন্তর্হতি

কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন, ফাল্গুন˃ ফাগুন (‘ল’ লোপ), ফলাহার˃ ফলার, আলাহিদা˃ আলাদা

১৫. অভিশ্রুতি

যদি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়, এবং পরিবর্তিত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই মিলিত স্বরধ্বনির প্রভাবে তার পরের স্বরধ্বনিও পরিবর্তিত হয়, তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন, ‘করিয়া’ (ক+অ+র+ই+য়+আ) থেকে অপিনিহিতির মাধ্যমে (র+ই-এর আগে আরেকটা অতিরিক্ত ‘ই’ যোগ হয়ে) ‘কইরিয়া’ হলো। অর্থাৎ অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ‘ই’ স্বরধ্বনিটির পরিবর্তন হলো। আবার ‘কইরিয়া’-এর র+ই-এর ‘ই’ তার আগের ‘ই’-র সঙ্গে মিলে গেলে হলো ‘কইরয়া’ বা ‘কইরা’। এবার ‘কইরা’-র ‘ই’ ও ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে হলো ‘করে’। এটিই অভিশ্রুতি। এরকম, শুনিয়া˃ শুইনিয়া˃ শুইনা˃ শুনে, বলিয়া˃ বইলিয়া˃ বইলা˃ বলে, হাটুয়া˃ হাউটুয়া˃ হাউটা˃ হেটো, মাছুয়া˃ মাউছুয়া˃ মাউছা˃ মেছো

১৬. র-কার লোপ

(আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) শব্দের ‘র’ ধ্বনি বা ‘র-কার’ লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে তাকে র-কার লোপ বলে। যেমন, তর্ক˃ তক্ক, করতে˃ কত্তে, মারল˃ মালল, করলাম˃ কল্লাম

১৭. হ-কার লোপ

(আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) অনেক সময় দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী ‘হ’ ধ্বনি বা ‘হ-কার’ লোপ পায়। একে হ-কার লোপ বলে। যেমন, ‘গাহিল’ (গ+আ+হ+ই+ল+অ)-এর ‘আ’ ও ‘ই’ স্বরধ্বনি দুটির মধ্যবর্তী ‘হ’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘গাইল’। এরকম, পুরোহিত˃ পুরুত, চাহে˃ চায়, সাধু˃ সাহু˃ সাউ, আল্লাহ˃ আল্লা, শাহ˃ শা

১৮. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি

পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে, এবং সেই দুটি স্বরধ্বনি মিলে কোন যৌগিক স্বর তৈরি না করলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য মাঝে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্ত ‘ব’ উচ্চারিত হয়। একে অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি বলে। যেমন, ‘যা+আ’, এখানে পরপর দুটি ‘আ’ স্বরধ্বনি আছে। দুটি যুক্ত হয়ে কোন যৌগিক স্বর তৈরি করছে না। তাই এখানে মাঝখানে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ উচ্চারিত হয়ে হবে ‘যাওয়া’। এরকম, নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া,

আমি নাজমুল । আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি চাকরী করছি। আমার চাকরী পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।
Posts created 2352

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

Begin typing your search term above and press enter to search. Press ESC to cancel.

Back To Top
(Official) Jhumka Jhule Kane Haay Song Lyrics ঝুমকা ঝুলে কানে হায় লিরিক্স shab e barat 2023 namaj koto rakat Xiaomi Bangladesh realme narzo 50i prime,Review,Processor,Picture,black,gsmarena,wallpaper,price in bangladesh World Refugee Day 2022: When did it begin? What is the theme of the year?