শবে বরাতের রোজা কয়টি আল কাউসার ২০২৪
শবে বরাত সকল মুসলমানের জন্য ফজিলতের রাত। শবে বরাত মানেই মুক্তির রাত। যাকে আরবিতে লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। আরবি বছরে শাবান মাসের 14 তম দিনে শবে বরাত পালিত হয়। শবেত এসেছে ফার্সি শব্দ থেকে। প্রতি বছর এই শবে বরাত উপলক্ষে রোজা থাকে। অনেক মুসলমান আছে যারা শবে বরাত পালন করে।
সবাই রোজা সম্পর্কে কোন তথ্য জানে না। অনেক মুসলমান আছে যাদের শবে বরাত সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান নেই। কিভাবে এবং কতটুকু রোজা রাখলে সবচেয়ে ভালো হবে এবং বেশি বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে তা জানার চেষ্টা করা। আমরা হাদিসে বর্ণিত শব বরাতের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। শবে কয়টি রোজা রাখতে হবে তা জানতে এই পোস্টটি পড়তে থাকুন।
শবে বরাত কয়টি রোজা?
অনেকে আছেন যারা শবে বরাতের রোজা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। এই শবে বরাতের দিনে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারলে আপনার ভাগ্য বদলে যেতে পারে। শবে বরাতের উদ্দেশ্য নফল ইবাদত। আর মানুষের সুবিধা অনুযায়ী তারা দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রোজা রাখে। এই রোজা নিয়ে সব মানুষেরই প্রশ্ন আছে।
নফল নামাজ নির্দিষ্ট দিনে নিজের গুনাহ মাফ করার জন্য করা হয়। আর আরবি মাসের প্রতি 13, 14, 15 তারিখে নবী মুহাম্মদ (সা.) তিন দিন রোজা রাখতেন। এই হিসাব করলে শাবান মাসে শবে বরাতের ৩টি নফল রোজা রাখা যায়। কেউ চাইলে ১৫ই শাবান উপলক্ষে ১টি রোজা রাখতে পারে।
2024 সালের শবে বরাতের উপবাসের তারিখ কী?
বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সবাই ইংরেজি বছর ব্যবহার করে। প্রত্যেকেই ইংরেজি তারিখ হিসাবে বিভিন্ন দিন এবং সাবাথ পালন করে। 2024 সালে কবে থেকে শবে বরাত শুরু হবে এবং কোন তারিখে রোজা রাখতে হবে তা জানার চেষ্টা করছেন অনেকে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পাওয়া যায় না।
শবে বরাতের রোজা রাখতে হলে ২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রোজা রাখতে হবে। আর তিনটি রোজা রাখতে চাইলে ২৪, ২৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ৩ দিন রোজা রাখতে পারেন। এই রোজার শুরুতে আপনার জীবনের গুনাহ মাফ হতে পারে এবং ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে।
শবে বরাতের রোজা রাখার নিয়ম
শবে বরাতের রোজা নিয়ে কারো কারো ভিন্ন মত রয়েছে। আসলে রমজান মাসে রোজা রাখার মতোই শবে বরাতের রোজা রাখতে হবে। রোজা রাখার নিয়ম অনেকেই জানেন না। শেষ রাতের আগে সেহরি খেতে হবে। তারপর সূর্য ডুবে গেলে এবং মাগরিবের আযান শুরু হলে রোজা ভাঙতে পারবেন। সঠিক আপনি রমজান মাসে রোজা রাখার মতো একই নিয়ম অনুসারে শবে বরাতের রোজা রাখতে পারেন।
শবে বরাতের উপবাস কখন?
কবে থেকে শবে বরাত শুরু হবে এবং কবে রোজা রাখতে হবে তা অনেকেই জানেন না। মূলত সবাই শবে বরাত পালন করে। অথচ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি আরবি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। অনেকে শবে বরাতের তিন দিন রোজা রাখেন। আপনি চাইলে 13, 14 এবং 15 তারিখে রোজা রাখতে পারেন। আর রোজা রাখতে হলে ১৫ই সাবান সোমবার রোজা রাখতে হবে।
শবে বরাতের রোজা কয়টি ২০২৪
বর্তমানে শবে বরাতের রোজা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কিছু আলেম সমাজ শবে বরাতের রোজা না রাখাই উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। অনেকে ঘোষণা করেছেন যে, শবে বরাত রোজা রাখলে জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং রোজা রাখাই উত্তম।
এ কারণেই অনেক সাধারণ মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে তাদের জন্য কতটা রোজা সবচেয়ে ভালো সে সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করেন। কেউ শবে বরাতের রোজা রাখতে চাইলে সাধারণত ১টি রোজা রাখতে পারে। তবে সবচেয়ে উত্তম হলো শবে বরাতের ৩টি রোজা রাখা।
শবে বরাতের রোজা কয়টি আল কাউসার
প্রশ্ন : শবে বরাত সম্পর্কে কিছু বিষয় জানতে চাই। আজকাল কারো কারো মুখে শোনা যায় যে, শবে বরাত বলতে কিছু নেই, এ রাতের ফযীলত বিষয়ে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযূ বা যয়ীফ। তাই শবে বরাতকে ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জায়েয নয়। তাদের কথা কি ঠিক? যদি ঠিক না হয় তাহলে হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : শবে বরাত অর্থাৎ পনেরো শা’বানের রজনীর ফযীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছে। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (তরজমা) আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে (শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।-সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৫৬৬৫
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযীলত প্রমাণিত হওয়ার জন্য এই একটি হাদীসই যথেষ্ট। তবুও হাদীসের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে এ বিষয়ক আরো হাদীসউল্লেখ করা সম্ভব। নিম্নে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করা হল।
হযরত আ’লা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হল, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হল অর্ধ শা’বানের রাত। (শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।-শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২,৩৮৩
উপরোক্ত হাদীস থেকে এ রাতের ফযীলত যেমন জানা যায় তদ্রূপ এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘ নামায পড়া, সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দুআ ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। মোটকথা, সহীহ হাদীস থাকা অবস্থায় শবে বরাতের ফযীলত ও গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা এবং এ সংক্রান্ত সকল রেওয়ায়েতকে মওযূ বা যয়ীফ বলা যে কত বড় অন্যায়, তা তো বলাই বাহুল্য।
প্রশ্ন : অনেকে শবে বরাতের পরদিন রোযা রাখেন। এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম কী জানতে চাই।
উত্তর : শা’বানের এক তারিখ থেকে সাতাইশ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা হাদীস শরীফে আছে। তাছাড়া আইয়ামে বীয তথা প্রতি মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোযা রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সাথে যয়ীফ সনদে বর্ণিত একটি হাদীসে বিশেষভাবে পনেরো তারিখের রোযা রাখার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তরজমা) পনেরো শা’বানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং পরদিন রোযা রাখ।-সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৩৮৪
আগেই বলা হয়েছে যে, যেহেতু বিভিন্ন সহীহ হাদীসে শা’বান মাসের রোযার সাধারণ ফযীলত এবং আইয়ামে বীযের রোযার ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে পাশাপাশি যয়ীফ সনদে উপরোক্ত হাদীসটিও বিদ্যমান রয়েছে তাই কেউ যদি এই সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে পনেরো শা’বানের রোযা রাখেন তাহলে তিনি ছওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন : শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কি না-এ প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। এক ধরনের চটি বই পুস্তিকায় বিভিন্ন নিয়মের কথা লেখাও থাকে। বিশেষ বিশেষ সূরা দিয়ে নামায পড়া বা নির্ধারিত রাকাত নামায বিশেষ সূরা দ্বারা আদায় করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন এই যে, হাদীস শরীফে এ দুই রাতে বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায আছে কি? থাকলে তা জানতে চাই। তদ্রূপ কেউ কেউ এ রাতগুলোতে জামাতের সঙ্গে নফল নামায পড়তে চায়। এ ব্যাপারে শরয়ী বিধান কী?
উত্তর : এ দু’রাতের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কোনো নামায নেই। সব সময় যেভাবে নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়বে অর্থাৎ দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব হয় আদায় করবে এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে। তদ্রূপ অন্যান্য আমলেরও বিশেষ কোনো পন্থা নেই। কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার, দুআ-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমল যে পরিমাণ সম্ভব হয় আদায় করবে। তবে নফল নামায দীর্ঘ করা এবং সিজদায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা উচিত, যা ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদীস শরীফ থেকে জানা গেছে। বিভিন্ন বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই এই সূরা এতবার পড়তে হবে-এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই, এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা।
বলাবাহুল্য যে, যে কোনো বই-পুস্তিকায় কোনো কিছু লিখিত থাকলেই তা বিশ্বাস করা উচিত নয়। বিজ্ঞ আলিমদের নিকট থেকে জেনে আমল করা উচিত। শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরয নামায তো অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস-াকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২১৯
তবে কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায় তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।
প্রশ্ন : শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষে বিভিন্ন মসজিদ ও দোকানপাটে আলোকসজ্জা করা হয়, পটকা ফুটানো হয় ও আতশবাজি করা হয়। সেই সাথে হালুয়া-রুটি, খিচুড়ি ইত্যাদি খাবারের আয়োজন করা হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর হুকুম কী জানতে চাই।
উত্তর : এগুলো কিছু ভুল রেওয়াজ, যা পরিহার করা আবশ্যক। আলোকসজ্জা বা আতশবাজিতে অপচয়ের পাশাপাশি বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণও রয়েছে। তাই তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য। আর হালুয়া-রুটি বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য বানানো,আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিতরণ করা তদ্রূপ খিচুড়ি রান্না করা এবং গরীব-মিসকীনদের মাঝে বন্টন করা সাধারণ অবস্থায় জায়েয ও ভালো কাজ হলেও এটাকে এ রাতের বিশেষ আমল মনে করা এবং এসবের পিছনে পড়ে এ রাতের মূল কাজ তওবা-ইস্তেগফার, নফল ইবাদত ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হওয়া শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মূল কথা এই যে, এই রাতগুলো উৎসবের রাত নয়, ইবাদত-বন্দেগী ও তওবা- ইস্তেগফারের রাত। তাই রসম-রেওয়াজের অনুগামী হয়ে এ রাতে উপরোক্ত কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়।-ইকতিযাউস সিরাতিল মুস-াকীম ২/৬৩২; আলমাদখাল লি ইবনিল হাজ্ব ১/২৯৯ ও ১/৩০৬, ৩০৭; তানকীহুল হামীদিয়াহ ২/৩৫৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/২৮৯
প্রশ্ন : সামনে রমযান মাস। এ মাসের পরিপূর্ণ বরকত, রহমত ও ফযীলত কীভাবে হাসিল করা যাবে সে ব্যাপারে জানতে চাই।
উত্তর : মাহে রমযান বছরের বাকি এগারো মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন, (তরজমা) ‘রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত।-সূরা বাকারা : ১৮৫
হাদীস শরীফে এসেছে, যখন রমযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। -সহীহ বুখারী হাদীস : ১৮৯৯
অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।- মুসনাদে আহমদ হাদীস ২১৬৯৮
তাই এ মাস হচ্ছে হেদায়েত লাভের মাস, আল্লাহ তাআলার রহমত লাভের মাস এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত হাসিলের মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা এবং তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির সনদ লাভে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। এ মাসের রোযাকে আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন। তাই প্রত্যেক সুস্থ ও বালিগ মুসলিম নর-নারীর জন্য রোযা রাখা অপরিহার্য। বলাবাহুল্য যে, ফরয ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করে।
রমযানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে তারাবী। রমযানের বরকতময় রজনীতে যত্নের সঙ্গে বিশ রাকাত তারাবীর নামায আদায়ে যত্নবান হওয়া উচিত। রমযান মাস হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসে লওহে মাহফূয থেকে প্রথম আসমানে কুরআন মজীদ নাযিল হয়েছে তাই কুরআন মজীদ শ্রবণের জন্য এবং এই পুণ্যময় রজনীতে আল্লাহর সান্নিধ্যে দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য তারাবী নামাযের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া কর্তব্য। অন্য সময়ও ব্যক্তিগতভাবে অধিক পরিমাণে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা উচিত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামায। এ মাসে যেহেতু সাহরী খাওয়ার সুবাদে সুবহে সাদিকের পূর্বেই সবাইকে উঠতে হয় তাই এ সুযোগে তাহাজ্জুদের ইহতিমাম করা সহজ। হাদীস শরীফে তাহাজ্জুদের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
তদ্রূপ সাধ্যমতো দান-সদকা করা উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অনেক বেশি দান-সদকা করতেন। এসব নেক আমলের পাশাপাশি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাও অপরিহার্য।
রমযান মাস হচ্ছে তাকওয়া ও পরহেযগারী অর্জনের মাস। আল্লাহ তাআলা রোযাকে ফরযই করেছেন তাকওয়া অর্জনের জন্য। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, গুনাহ থেকে সর্বোতভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া রোযা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই রোযাকে নিখুঁতভাবে আদায়ের উদ্দেশ্যে মুমিন যখন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে তখন আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে তাকে তাকওয়া ও পরহেযগারীর শক্তি দান করেন। এজন্য সকল গুনাহ থেকে, বিশেষ করে গীবত, শেকায়েত, কুদৃষ্টি, কুচিন্তা, হারাম পানাহার ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য।
প্রশ্ন : তারাবীর সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে, এই নামায আট রাকাত, বিশ রাকাত তারাবীর কোনো প্রমাণ নেই। জানতে চাই, তাদের দাবির সত্যতা কতটুকু?
উত্তর : এই দাবি সম্পূর্ণ ভুল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানা থেকে শুরু করে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং পরবর্তী কোনো যুগেই তারাবীর নামায বিশ রাকাতের কম ছিল না। এ বিষয়ে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর একটি বিস্তারিত ও প্রামাণিক প্রবন্ধ আলকাউসার অক্টোবর-নভেম্বর ২০০৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। পরে তা ‘মাকতাবাতুল আশরাফ’ থেকে পুস্তিকা আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং বিশ রাকাত তারাবীর অস্বীকারকারীদের বিভ্রান্তি ও প্রপাগাণ্ডার জবাব দেওয়া হয়েছে। আগ্রহী পাঠক সেটি পড়ে নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, তারাবীর নামাযে বেশ কিছু ত্রূটি অনেক মসজিদেই দেখা যায়। এগুলো থেকেও বেঁচে থাকা একান্ত জরুরি। যেমন-নামায তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য রুকু-সেজদা, কওমা-জলসা ইত্যাদিতে তাড়াহুড়া করা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ই’তিদালে আরকান-এর ওয়াজিব পর্যন্ত তরক হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে যে, সকল নামাযে, তা ফরয হোক বা নফল, রুকু-সেজদা, কওমা-জলসা ইত্যাদি শান্তভাবে আদায় করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া কর্তব্য।
তদ্রূপ এত তাড়াতাড়ি কুরআন তেলাওয়াত করা হয়ে থাকে যে, দ্রুততার কারণে শব্দাবলিও ঠিকমতো বোঝা যায় না। এত দ্রুত না পড়ে তারতীলের সঙ্গে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করতে হবে।
প্রশ্ন : আমাদের কিছু ভাই বলে থাকেন যে, আমরা যে পদ্ধতিতে ঈদের নামায পড়ে থাকি তা সুন্নাহসম্মত নয়। সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল বারো তাকবীরের সঙ্গে নামায আদায় করা। তাদের কথা কতটুকু ঠিক? আর আমরা যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করি তার দলীল কী?
উত্তর : ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে ওহীর উপর নির্ভরশীল। তাই এ ধরনের বিষয়ে বুনিয়াদ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে ঈদের নামাযের নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়েছেন এবং তাঁরা পরবর্তী লোকদেরকে সেই নিয়মই শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতি শিখিয়েছেন তার সবগুলোই সঠিক ও জায়েয। ঈদের তাকবীর বলার ক্ষেত্রেও একাধিক নিয়ম পাওয়া যায়, যার সবগুলোই সঠিক। এক্ষেত্রে বারো তাকবীরের নিয়ম যেমন হাদীসে পাওয়া যায় তেমনি চার তাকবীরের নিয়মও হাদীস শরীফে রয়েছে। তাই বারো তাকবীরের পন্থাও জায়েয পন্থা। কোনো দেশে বা কোনো ঈদগাহে যদি এই পদ্ধতিতে নামায হয় তাহলে আপত্তি করার কিছু নেই। ঝগড়া-বিবাদের তো প্রশ্নই ওঠে না।
তদ্রূপ যে পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা নামায পড়ে থাকি সেই পদ্ধতিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং একাধিক জলীলুল কদর সাহাবী এই পদ্ধতির উপর আমল করেছেন। অতএব এ বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানো সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচায়ক। নিম্নে এ পদ্ধতির দু’টি দলীল উল্লেখ করা হল।
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আবু আবদুর রহমান কাসিম বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, ‘‘নবীজী ঈদের দিন আমাদের নামায পড়ালেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষে আমাদের দিকে তাকিয়ে ইরশাদ করলেন, ‘ভুলো না যেন, তারপর হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বন্ধ করে বাকি চার আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, জানাযার তাকবীরের মতো (ঈদের নামাযেও চারটি করে তাকবীর হয়ে থাকে)’।’’-তহাবী ২/৩৭১ (কিতাবুু যিয়াদাত ১ম বাব)
এই হাদীসটি সহীহ এবং এর সকল রাবী ‘ছিকাহ’ নির্ভরযোগ্য। ইমাম তহাবী রাহ.-এর ভাষ্য অনুযায়ী এদের বর্ণনাসমূহ সহীহ হওয়া বিশেষজ্ঞদের নিকট সর্বজনবিদিত। ইমাম তহাবী রাহ. একথাও বলেছেন যে, এই হাদীসের সনদ ওই সব হাদীসের সনদ থেকে অধিক সহীহ যেখানে বারো তাকবীরের কথা বলা হয়েছে।
২. (প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম) মাকহুল বলেছেন, আমাকে আবু হুরায়রা রা.-এর সহচর আবু আয়েশা জানিয়েছেন যে, (কূফার আমীর) সাঈদ ইবনুল আছ হযরত আবু মুসা আশআরী রা. ও হযরত হুযায়ফা রা.কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে কয় তাকবীর দিতেন? আবু মুসা আশআরী রা. উত্তরে বললেন, জানাযার তাকবীরের সমসংখ্যক (চার) তাকবীর দিতেন।
হুযায়ফা রা. (আবু মুসা রা.-এর সমর্থনে) বললেন, তিনি ঠিক বলেছেন।
আবু মুসা রা. আরো বললেন, আমি যখন বসরার আমীর হিসাবে সেখানে ছিলাম তখন চার তাকবীর দিয়েছি। আবু আয়েশা বলেন, সাঈদ ইবনুল আছ-এর এই প্রশ্নের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি আরো বলেন, আবু মুসা রা-এর বাক্য ‘জানাযার মতো চার তাকবীর’ এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ১১৫০; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ২/৭৮, কিতাবু সালাতিল ঈদাইন, বাব নং ১২; মুসনাদে আহমদ ৪/৪১৬
সনদের বিবেচনায় এই হাদীসটি হাসান এবং হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার। বিস্তারিত আলোচনার জন্য আলকাউসার অক্টোবর ও নভেম্বর ২০০৫ সংখ্যা অথবা মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত পুস্তিকা ‘সহীহ হাদীসের আলোকে তারাবীর রাকাআত সংখ্যা ও সহীহ হাদীসের আলোকে ঈদের নামায’ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
শেষ কথা
প্রতি বছর শাবান মাসে মুসলমানদের ভাগ্য বদলাতে আসে শবা বরাত। এই শবে বরাত উপলক্ষে প্রত্যেক মুসলমান গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর ইবাদত করে এবং নফল নামাজ ও রোজা রাখে। অনেকেই জানেন না শবে কয়টি রোজা রাখতে হবে। হাদিস মোতাবেক শব বরাতের কতগুলো রোজা রয়েছে সে তথ্য আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে আগেই উল্লেখ করেছি। আশা করি আপনি শবে বরাতের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন। ধন্যবাদ