সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি ? সিদ্ধান্তবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয়
সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি ? সিদ্ধান্তবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয়

সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি ? সিদ্ধান্তবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয়

সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি ? সিদ্ধান্তবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয়

সিদ্ধান্ত গ্রহণ মানব জীবনের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে এই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপরই। একমাত্র সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই বদলে দিতে পারে একজনের জীবন। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলতে কি বুঝায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রত্যেকেরই ধারণা থাকা প্রয়োজন। আর আজকের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলতে কি বুঝায়

একজন ব্যবস্থাপককে যা কিছুই করতে হয় তা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে করতে হয়। তাই অনেকেই ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া মনে করেন। সাধারণ ভাবে কর্মসম্পাদনের জন্য বিকল্প কর্মপন্থাসমূহ হতে উত্তম পন্থা গ্রহণ করাকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে। 

সিদ্ধান্ত গ্রহণ কি সে সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষী নানা সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

১. P. F. Drucker-এর মতে, “একজন ম্যানেজার যা কিছু করেন তা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমেই করেন।”

২. অহিরচ ও কুঞ্জ-এর মতে, “বিকল্পগুলো হতে একটি কার্যধারা নির্বাচন করাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে।”

৩. R. S. Dagver-এর মতে, “সুনির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিকল্প আচরণ হতে একটিকে বেছে নেয়ার যে পন্থা তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ।”

সুতরাং বলা যায়, পরিকল্পনা প্রণয়নে অনেকগুলো বিকল্প হতে যে কোন একটি বিকল্প বেছে নেয়াকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থাপনার একটি মৌলিক কাজ। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে অনেক লেখক বা তাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেছেন। ব্যবস্থাপনার সাফল্য অর্জন বহুলাংশে নির্ভর করছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতার উপর। সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন দিকগুলো নিচে বর্ণিত হলো-

সমুচ্চায় অব্যয় : যে অব্যয় পদের বা কন্টেন্ট বিয়োগ সংকোচন প্রভৃতি সাধন করে, কলকে সমুচ্চায় অব্যয় বলে। সমুচ্চ অব্যয়কে আবার ভাগে ভাগ করা হয়।

(ক) সংযোজক (দুই বাত্যের শব্দ বা পদকে করে) : লি শ্যামলী আর শেফালিকে ডাকে নেকালী। “রচনার প্রধান গুণ এবং প্রথম প্রয়োজন—সরলতা ও ক্ষমতাতা। পলাশীর যুদ্ধ বাংলা ভারত-ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। কামনার জন্য ধনী হয়, আর লোভ বাদই সুখী হয়। “মৃত্তিকা ও কাঞ্চনে যাঁর সমজ্ঞান তিনিই কৃতকার্য।” সেইরূপ মায়, বনাম, ওরফে ইত্যাদি সংযোজক সমুচ্চয়ী অব্যয়।

(খ) (খ) বা বিকলপকল্পক (দুই বা বিকল শব্দ পদ বা কথাকে পৃথক্‌ আলাদা আলাদা আলাদা আলাদা বা তাধিক বিষয়ের মধ্যে নির্বাচন) : তুমি আগে না আমার এখানে, আমি তোমার ও যেতে পারি? “এই জীবনটা ভালো মন্দ যা-হোক একটা- কিছু পরামর্শ। “সধবা অথবা বিধবা তোমার রহিবে উচ্চশির।” তুমি নিজে যাও, না হয় ভাইকে বল। কী ধনী কী নির্ধন সকলেই দেশপুর মৃত্যুতে শোবিহবল। গজেন বা নিতাই একজনকে ডাকবি।

(গ) তিরেকাত্মক (অভাব বা ভেদ অর্থ প্রকাশ করে): “পরের পুণ্যে সতীর পুণ্য, নহিলে (তাহার অভাবে) খরচ বাড়ে।” সত্য বল, ন্যাক্কারজনক (না বলিলে) পাইবে। মন দিয়া লেখাপড়া কর, নচেৎ (তাহার অভাবে) ভালোভাবে করতে পারি না। আমার ভাগ্যই যদি না মন্দ হবে, আগে বাবাই বা মারা যাবে কেন?

(ঘ) সঙ্কোচক (স্বাভাবিক বা আশঙ্ক ফল না ব্যখ্যায় বিপরীত ফলটি বিপরীতয়) : গৎ সব বুঝল, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারল না। অনেক বার বার বার বারবার স্মরণ করছি! যত দেবতার দিন, তবু বন্দেমাতরম্ ভুলব না। তুমি বরঞ্চ একবার বিজয় বাবুকে ধর। “কেহ কহিয়া দিতে না, তথ্যপি তপোবন বলিয়া বুঝিতেছে”। অন্যের প্রতিকার করতে হবে না, তাবু অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে কেন? আমার কাছে লাভ তো হবেই না, উপরন্তু ক্ষতিকর মনে হবে। সেই রূপ, পরন্তু, প্রত্যুত, জলপ্রাচ, পক্ষান্তরে, আবার ইত্যাদি এই শ্রেণির ‘অব্যয়।

(ঙ) হেতু বোদ্ধা (হেতু আলোচনায় দুইটি কথা বলেছেন) “বাড়ি আমাকে যেতে হবে, কেননা এ আমার মিউ আদেশ”। “শাস্তি ঠিক করতেই হবে, আপনার কাছের গুপ্তচরের সাথে আপনার যোগাযোগ ছিল৷ সেইরূপ এই হেতু, এইজন্য, কারণ, এই কারণে ইত্যাদি হেতুবোধক অব্যয়।

(চ) সিদ্ধান্ত বাচক (কোনো সিদ্ধান্ত বা মীমাংসা দুইটি কথাকে বলে) ভিক্ষায় না বেরুলে অভিমান যায় না, তাই গুরু শিবাজীকে নিয়ে ভিক্ষায় বের হন। গজগজ সকলেই প্ল্যাগ সভা করা, তাই তাঁকেও বাধা করতে হল। সেইরূপ আমার, উপস্থিতিকজেই ইত্যাদি নির্ধারণ করা অব্যয়।

(ছ) সংশয়-চিহ্ন (কোনো সন্দেহ প্রকাশ করে): কাজটা শেষ না হলে তিনি অসন্তুষ্ট হন? “সম্মুখে চরণ নাহি, পাছে লোকে কিছু বলে।” পাশের বাঁশী বাজে! লোকটা তুমি পাগল! ছোটো বাবুকে ডাকতে হলে তিনি বারবার?

(জ) নিত্যসম্বন্ধী (দুইটি অব্যয় নিত্য সম্বন্ধী হতে দুইটি কথা বলছে) : তিনি ধনী বটে, কিন্তু অবিনয়ী নন। আপনি যদি বলেন, তবে সেখানে যেতে হবে। হয় জয়, নয় মৃত্যু। অনেক ভিক্ষা করিব, জানাপি আত্মীয়ের বাধারস্থ হতে হবে না। “যেমন প্রভু, তার ভৃত্য”। আপনি অসন্তুষ্ট হন, তাই আপনাকে বলিনি। পালা ঘোরা নিশীথিনী প্রচন্ড ঝঞ্ঝা। যে না পাওছি, আমিনি কেউ তোমার ঘাড়ে! মন দিয়ে কাজ কর, নতুবা খসে পড়। “যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মঙ্গে—…তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা!” সেই রূপ হয়—না হয়, মোটে—তাঁহা, যদি-তো, যাঁহা—তাঁহা, ভাগে—তাই, যে—সেই, যত—তখন, যখন-তখন ইত্যাদি এই শ্রেণির অব্যয়। এই অব্যয়কে সাপেক্ষ অব্যয় বলে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *