স্পেস ট্যুরিজম কি? স্পেস ট্যুরিজম কয় ধরনের হয়ে থাকে?

স্পেস ট্যুরিজম কি? স্পেস ট্যুরিজম কয় ধরনের হয়ে থাকে?

স্পেস ট্যুরিজম কি? স্পেস ট্যুরিজম কয় ধরনের হয়ে থাকে?

মানুষের আকাশে উড়ে বেড়ানো শখ বহুদিনের। একমাত্র ইচ্ছেশক্তির জোরেই উইলবার ব্রাদার্স-এর হাত ধরে মানুষের আকাশে উড়ে বেড়াবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এই রকম স্বপ্নটা হয়তো আমাদের পূর্বপুরুষরা দেখেছিল। কিন্তু তারা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। গত ১০০ বছর ধরেই মানুষ উড়ে বেড়ানোর কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে। অস্বাভাবিক ব্যয় থেকে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আনতে পেরেছে আকাশে উড়ে বেড়ানোর ইচ্ছেকে। তারই ধারাবাহিকতায় মানুষ এখন মহাকাশ ভ্রমন সকলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। 

অ্যাপোলো ১১ চন্দ্রাভিযানের ৫২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, ম্যারি ওয়ালেচ(৮২), বোজেসের ছোটভাই মার্ক বোজেস, এবং ওলিভার ড্যামেন(১৮) মিলে ১০ মিনিটের মহাকাশ যাত্রা করে আসলো। 

স্পেস ট্যুরিজম কি? স্পেস ট্যুরিজম কয় ধরনের হয়ে থাকে?

তারও কিছুদিন আগে রিচার্ড ব্র্যানসনের প্রতিষ্ঠান ভার্জিন গ্যালাক্টিকার ‘ইউনিট ২০২২’ প্রথমবারের মতো মহাকাশ টুরিজম-এর নতুন দিক উন্মোচিত করে। এছাড়াও ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এর মাধ্যমে স্পেস ট্যুরিজম বিষয়টিকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চান।

এসকল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ধারণা করা যায় ভবিষ্যতে স্পেস ট্যুরিজম হতে যাচ্ছে একটি বড় ইন্ডাস্ট্রি এবং সাধারন মানুষের মহাকাশ যাত্রার মাধ্যমে জিরো গ্র্যাভেটিতে অবস্থান করার স্বপ্ন পূরণের জন্য স্পেস ট্যুরিজম গুলো বেশ ভালো ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আজকে আমরা স্পেস ট্যুরিজম, স্পেস ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান, কারমান লাইন এবং স্পেস যাত্রার খরচ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

স্পেস ট্যুরিজম কি?

স্পেস ট্যুরিজম হচ্ছে মানুষের ভ্রমণ উপযোগী স্পেইস যাত্রা যা সাধারণ মানুষকে একজন অ্যাসট্রোনাটস -এর মত মহাকাশ ভ্রমণের পরিতৃপ্তি দেবে।

স্পেস ট্যুরিজম কয় ধরনের হয়ে থাকে?

স্পেস ট্যুরিজম সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- 

  • অরবিটাল
  • সাব-অরবিটাল
  • লুনার স্পেইস

পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত অরবিটাল এবং সাব-অরবিটাল ভ্রমণ করা সম্ভব হয়েছে। অরবিটাল ট্যুরিজম সর্বপ্রথম সম্পন্ন করেছে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান রসকোমস। সাব-অরবিটাল ট্যুরিজম গুলো নিয়ে কাজ করছে ব্লু অরিজিন এবং ভার্জিন গ্যালাক্টিকা। এছাড়াও চাঁদের আশপাশ থেকে ঘুরে আসার জন্য কাজ করছে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেইস এক্স।

স্পেস ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করছে কয়টি প্রতিষ্ঠান?

স্পেস ট্যুরিজম নিয়ে এখনও পর্যন্ত কাজ করছেন তিনটি বড় বড় জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- 

  • ব্লু অরিজিন
  • ভার্জিন গ্যালাক্টিকা
  • স্পেইস এক্স

এরমধ্যে ‘ব্লু অরিজিন’ হচ্ছে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের। ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিকা’র প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে ব্রিটিশ ধনকুব রিচার্ড ব্র্যানসন। অন্য আরেকটি স্পেইস ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান ‘স্পেইস এক্স’ হচ্ছে এলন মাস্ক-এর প্রতিষ্ঠান।

কারমান লাইন কি?

কারমান লাইন হচ্ছে এক প্রকার নির্ধারক লাইন যা পৃথিবীর এবং মহাকাশের বাউন্ডারি কে নির্দেশ করে। সাধারণত কারমান লাইন পার হওয়াকেই মহাকাশ যাত্রা বলা হয়ে থাকে। এই কারমান লাইন নিয়ে নানাজনের নানা রকম মন্তব্য রয়েছে। তবে সাধারণভাবে বলা যায় পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে 100 কিলোমিটার/ ৫৪ নটিক্যাল মাইল অথবা 62 মাইল এর পর কল্পিত লাইনকে বলা হয় কারমান লাইন। এই কারমান লাইন পার হওয়ার পরে শুরু হয় মহাকাশ।

ভার্জিন গ্যালাক্টিকা’র  স্পেইস যাত্রা-

ভার্জিন গ্যালাক্টিকা’র রকেট সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার বা ৫৪ মাইল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যেখানে কারমান লাইন 100 কিলোমিটার, সেখানে ৮৮ কিলোমিটার যাত্রা করে মহাকাশ ভ্রমণের দাবি করায় অনেকেই ভার্জিন গ্যালাক্টিকা’র মহাকাশ যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। 

গত ১১ জুলাই, ২০২১-এ ব্রিটিশ ধনকুব রিচার্ড ব্র্যানসন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর ‘অপারেশন ঘাঁটি স্পেসপোর্ট আমেরিকা’ থেকে তাদের প্রথম মহাকাশ যাত্রা শুরু করে। বলা হচ্ছে তাদের এই প্রকল্পটি প্রস্তুত করতে সময় লেগেছিল .১৭ বছর। এতসব বিতর্ক থাকা সত্বেও, ‘নাসা’ বলছে যেসব পাইলট, মিশন পরিচালক ও নাগরিক এই ৮০ কিলোমিটার-এর সীমা পার হবেন, তাঁরাই নভোচারী হিসেবে গণ্য হবেন।

ব্লু অরিজিনের  স্পেইস যাত্রা-

ব্লু অরিজিন হচ্ছে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস তিনি বলেন তার পাঁচ বছর বয়স থেকেই তিনি স্পেসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কারণ অ্যাপোলো ১১ চন্দ্রাভিযানের সময় তাঁর বয়স ছিল পাঁচ বছর।  তাই তিনি 2000 সালে তারা চালু করেন এই ব্লু অরিজিন নামক প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তুলনায় একমাত্র ব্লু অরিজিন শুরু থেকেই চেয়েছিল কিভাবে কম টাকায় স্পেস যাত্রাকে আরো বেগবান করা যায়। জেফ বেজোস বলছে ২০২৪ সাল নাগাদ তারা চাঁদে সাধারণ মানুষ পাঠাতে পারবে।

ব্লু অরিজিন স্পেইস এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ২০ জুলাই ২০২১, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম টেক্সাসের ভ্যান হর্নের নিজস্ব উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে ‘নিউ শেপার্ড’ রকেট নিয়ে। মাত্র ১০ মিনিটের যাত্রায় তিনি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন ‘আমি সারা জীবন মহাকাশে এভাবে উড়তে চেয়েছি। এটি একটি দুঃসাহসিক কাজ এবং আমার জন্য অনেক বড় কিছু’। 

সাধারণ মানুষ কি স্পেইস যাত্রা করতে পারবে?

বর্তমানে এতসব প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে সাধারণ মানুষের স্পেস যাত্রাটা বাস্তবে রূপদান করতে সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এখন খরচ কমিয়ে কিভাবে সাধারণ মানুষের মহাকাশযাত্রা কে ত্বরান্বিত করতে পারে সেই প্রচেষ্টায় চালাচ্ছে। স্পেইস যাত্রা জন্য কাজ করার প্রতিষ্ঠান বেশি হওয়াতে কম্পিটিশন এর মাধ্যমে তুলনামূলক দাম কমে আসতে পারে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় সাধারণ মানুষের জন্য স্পেইস যাত্রা  উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।  তখন বর্তমান সময় যেমন ভ্রমণের জন্যএক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়েতের জন্য বিমান ব্যবহার করছে  দিনদিন যা অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে সাধারন মানুষ এই ব্যয় বহন করতে সক্ষম হয়েছে।  শুধুমাত্র কম্পিটিশ-এর কারনে যদি স্পেস যাত্রায় ব্যয় ভার কমিয়ে আনা যায়, তাহলে  সাধারণ মানুষের স্পেস যাত্রা খুব বেশি দূরে নয়। আর কিছুদিন পর হয়তো  টাকা থাকলেই যে কেউ মহাকাশ যাত্রায় অংশ নিতে পারবে। 

স্পেস যাত্রা নিয়ে মানুষ কতটা আগ্রহী?

জেফ বেজোস এর প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন এর তৈরি ‘নিউ শেফার্ড’-এর জন্য একজন যাত্রী প্রয়োজন ছিল। সে যাত্রি কে হবে তা নির্বাচন করার জন্য নিলামের আয়োজন করা হয়। তখন ব্লু অরিজিন এর বিক্রয় পরিচালক আরিয়ান কর্নেল বলেন ১৫৯ টি দেশে প্রায় সাত হাজার ৬০০ মানুষ নিলামে অংশগ্রহণ করেছে। এ থেকে আমরা ধারণা করতে পারি স্পেস যাত্রার জন্য মানুষের আগ্রহ সম্পর্কে। অনেক মানুষই এখন স্পেস যাত্রায় স্বাদ নিতে প্রস্তুত। এছাড়া ভার্জিন গ্যালাক্টিকা অগ্রিম প্রায় 600 টিকেট বিক্রি করে ফেলেছে তাদের আগামী স্পেস যাত্রার জন্য। 

স্পেস ট্যুরিজমের খরচ কেমন হতে পারে? 

স্পেস ট্যুরিজমে যেতে হলে আপনাকে প্রথমত যথেষ্ট পরিমানে ধনী হতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কতটুকু ধনী হলে স্পেস ট্যুরিজমের যাওয়া সম্ভব হবে? 

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ১০ মিনিটের জন্য পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উপরে যাত্রার জন্য আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করতে রাজি হবেন? জেফ বেজোস এর সাথে মহাকাশ ভ্রমণের জন্য এক ব্যক্তি নিলামে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচ করতে রাজি হয়েছেন। 

আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে ভার্জিন গ্যালাকটিকা দুই থেকে আড়াই লাখ ডলারে প্রায় 600 টিকেট বিক্রি করেফেলেছে। সে দিক থেকে চিন্তা করলে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা অবশ্যই অনেক বেশি মনে হতে পারে। তবে এলন মাস্কের প্রজেক্টে খরচ হতে পারে আরও বেশি, যা প্রায় পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে ইলন মাস্কের মহাকাশযানের পরিধি একটু ভিন্ন । তাঁর চিন্তাভাবনা হচ্ছে- এমন একটি স্পেস যান তৈরি করবে যা পৃথিবী কে একবার ঘুরে আসতে সক্ষম হবে।

আমি নাজমুল । আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি চাকরী করছি। আমার চাকরী পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।
Posts created 2348

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

Begin typing your search term above and press enter to search. Press ESC to cancel.

Back To Top
(Official) Jhumka Jhule Kane Haay Song Lyrics ঝুমকা ঝুলে কানে হায় লিরিক্স shab e barat 2023 namaj koto rakat Xiaomi Bangladesh realme narzo 50i prime,Review,Processor,Picture,black,gsmarena,wallpaper,price in bangladesh World Refugee Day 2022: When did it begin? What is the theme of the year?