২৫-২৬ হাজার টাকায় POCO X3 Pro কেমন হবে

২৫-২৬ হাজার টাকায় POCO X3 Pro কেমন হবে.

মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে ২৫-২৬ হাজার টাকার আশেপাশের বাজেট টা এমনেতেই গরম। আর এই গরমেই বৈশাখী ঝড়ের মত তাণ্ডব সৃষ্টি করছে POCO এর তরফ থেকে ফ্ল্যাগশিপ কিলার POCO X3 Pro, এই ফোন নিয়ে তাই চলছে চরম হাইপ। আর এ কারণেই এই ফোন নিয়ে সবার জানতে চাওয়ারও কমতি নেই।

কি আছে এই ফোন এ, কি নেই এসবই জানবো আজকে। সাথে কি কারণেই বা এত হাইপ সৃষ্টি করছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটা কি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে কি হবে না এটির যথাযথ উত্তর ও পেয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ।

তার আগে জানা দরকার এ ফোনটির দাম এর সম্পর্কে। বেস ভ্যারিয়েন্ট থেকে সর্বোচ্চ ভ্যারিয়েন্ট কোনটি কত টাকা দামে কি কি অফার করছে সেটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন হওয়া উচিত।

POCO X3 এর বর্তমান মূল্য কত?

POCO X3 বর্তমানে বাংলাদেশে

১. Officially

২. Unofficially 

উভয়ভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই Unofficial ফোন এর দাম Official ফোন এর চেয়ে কিছুটা কমে পাওয়া যায়।

তবে Official/Unofficial এর মধ্যে আপনি কোনটি নিবেন তা একান্ত আপনার সিদ্ধান্ত।

Unofficial এর মধ্যে আবার ২ ধরনের ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, যথা-

১. International/Global 

২. Indian

এর মধ্যে Indian ভ্যারিয়েন্ট এর দাম আবার International/Global ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়ে কম হয়ে থাকে।

সুতরাং সব মিলিয়ে বর্তমান বাজারে এর দাম হলো-

Official: 

 6/128 GB = 30000 টাকা

 8/256 GB = 32000 টাকা

 Unofficial:

 6/128 GB (Global) = 25500-26000 টাকা

 8/256 GB (Global) = 29000-30000 টাকা

 6/128 GB (Indian) = 24500-25000 টাকা 

বিশেষ দ্রষ্টব্য-  এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, Unofficial ফোন গুলোর দাম সাধারণত ফিক্সড থাকে না। প্রতিনিয়তই দাম উঠানামা করে থাকে। তাছাড়াও দোকানভেদেও কখনো কখনো দামের তফাত হতে পারে। তাই এখানে উল্লেখিত দামই ফিক্সড দাম নাও হতে পারে। 

তবে আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় দোকানগুলো এবং বিশ্বাসযোগ্য সোর্স থেকেই তথ্য গুলো এখানে উল্লেখ করেছি। কেনার পূর্বে যে দোকান থেকে কিনবেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে দাম জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো।

এখন আসা যাক এর হাইপ এর কারণ এ৷ এর কারণ হিসেবে রয়েছে এর প্রসেসর। তাহলে এবার এর প্রসেসর নিয়ে আলোচনা করা যাক-

Processor – Qualcomm Snapdragon 860

POCO X3 Pro এ ব্যবহৃত এই প্রসেসরটি একটি ফ্ল্যাগশিপ কিলার চিপসেট । ফ্ল্যাগশিপ কিলার ফোনগুলো তে আমরা এই চিপসেট দেখতে পেয়েছি যা এই বাজেটের ডিভাইসে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক।

এবং এই বাজেটের অন্য কোনো ডিভাইস এই চিপসেট দিতে পারছে না। তাই বলা যায় এরকারনেই এই ফোন নিয়ে এত হাইপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষভাবে গেইমার দের জন্য এটি 

অসাধারণ কিছুই অফার করছে। গেইমার দের চাহিদা পূরণে এই ফোন তাই সবার চেয়ে এগিয়ে। তবে POCO এই চিপসেটকে নতুন চিপসেট হিসেবে আমাদের সামনে নিয়ে আসলেও এটি প্রকৃতপক্ষে নতুন কোনো চিপসেট নয়। মূলত Snapdragon 855+ কেই সামান্য আপগ্রেড করে Snapdragon 860 বলা হচ্ছে। এই দুটি চিপসেট প্রায় একই। এই চিপসেটটি ২ বছর পুরনোও বটে। তবে এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করা হচ্ছে না, কারণ এর পারফরম্যান্স অভিযোগ এর সুযোগ তো দূরের থাক বরং সমীহ করারই দাবি রাখে।

এটি 7 nm ফেব্রিকেশনে তৈরী একটি Octa Core প্রসেসর। এই 8 টি কোরের মধ্যে –

1 টি কোর 2.96 GHz এর

3 টি কোর 2.42 GHz এর

4 টি কোর 1.78 GHz এর

আর GPU হিসেবে রয়েছে Adreno 640 যা সামান্য Overclocked

এর পারফরম্যান্স এর ধারণা দেওয়ার জন্য কিছু

বেঞ্চমার্ক দেখানো হলো –

AnTuTu        : 453223 (v8)

GeekBench : 2574 (v5.1)

GFXBench   : 38fps (ES 3.1 onscreen)

সুতরাং এই প্রসেসর এর পারফর্মেন্স এর ধারণা আশা করি সকলে পেয়ে গেছেন। তবে POCO X3 Pro তে এই প্রসেসর এর পারফর্মেন্স এবং সম্যকভাবে এর এক্সপেরিয়েন্স জানাও দরকার। 

Performance-

এই ফোন এর পারফরম্যান্স জানতে হলে দেখতে হবে এর গেইমিং এক্সপেরিয়েন্স কেমন। তাছাড়া আরো কিছু ব্যপারও আছে। গেইমিং নিয়ে পরে আলোচনা করা যাক। তার আগে সাধারণ যেই কাজ গুলো আছে সেক্ষেত্রে এর পারফরম্যান্স জানা যাক। 

এর র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট বেশ ভালো। তাই অনেক গুলো app একসাথে চালানো যাচ্ছিল। ভারি কাজ কিংবা multitasking সবই অনায়াসে করা যায়। তবে সামান্য কিছু টুকটাক ল্যাগ এর অস্তিত্ব খেয়াল করতে পারেন, তবে তা খুবই সামান্য যা সাধারণত পাত্তা পাওয়ার যোগ্য নয়। 

Storage-

 এর স্টোরেজ টাইপ হলো UFS 3.1। এটি সাধারণত ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলো দিয়ে থাকে। এই বাজেটের অন্য কোনো ফোন এই স্টোরেজ টাইপ দিতে পারে নি। 

এই স্টোরেজ এর জন্য আপনি একটি ফাস্ট এবং স্মুথ এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। এটি খেয়াল করবেন কোনো File open, save ইত্যাদি করার ক্ষেত্রে। তাছাড়াও Data Transfer এর বেলাতেও এর ভূমিকা খেয়াল করতে পারবেন

এই স্টোরেজ টাইপ এর জন্য ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস এর ফিল পাওয়া যাবে যা এই বাজেটে অন্যান্য ফোন থেকে এই ফোনকে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে রাখবে। এবার এর গেইমিং পারফর্মেন্স কেমন তা জানা যাক।

Gaming Performance-

এই ফোনের ফ্ল্যাগশিপ চিপসেট এর থেক- যেমন মানের গেইমিং রেজাল্ট আশা করা যায়, এর  রেজাল্টও তেমনি ছিল। গেইমিং পারফর্মেন্স এর ধারণা দেওয়ার জন্য কিছু গেইম এর পারফর্মেন্স নিয়ে কথা বলা যাক।

১. PUBG

PUBG তে HDR গ্রাফিক্সে Extreme FPS এ খেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে 60 FPS এই স্মুথভাবে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। 

আর Ultra HD গ্রাফিক্সে Ultra FPS এ খেলতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে প্রায় 40 FPS এর মত পাওয়া যায়।

গেমপ্লে তে কোনোরকম ল্যাগ এর দেখা পাওয়া 

যাবে না এবং বেশ স্মুথ গেইমিং এক্সপেরিয়েন্স ই পাবেন। 

২. Call of Duty Mobile

এটি এমনেতেই একটি Optimized গেইম। তাই এর পারফর্মেন্স ছিলো আরো বেশি স্মুথ। 

Very High গ্রাফিক্সে Max Frame Rate এ খেলতে পারবেন। এই সেটিংসে গেইম একদম স্মুথ ও ল্যাগবিহীন ভাবে খেলা যাচ্ছিল। 

৩. Asphalt 9: Legends

এই গেমে খুব ভালো এবং উপভোগ্য গ্রাফিক্স পাওয়া যায়। তবে মাঝে মাঝে সামান্য পরিমাণ ল্যাগ এর দেখা পেতে পারেন। তবুও খুবই ভালো এবং উপভোগ্য গেইমিং এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যাচ্ছিল।

৪. Genshin Impact

Genshin Impact কে গেইমিং টেস্ট এর আদর্শ গেইম ধরা হয়। 10 GB সাইজের বিশাল এই গেইমটিও এই ফোনেও বেশ স্মুথভাবে খেলা যাচ্ছিল। তবে ঘন বা গভীর জায়গা তে গেলে গ্রাফিক্স রেন্ডারিং এ সামান্য সময় লাগে এবং তখন খুব সামান্য ল্যাগিও হয়ে যায়৷

বেশি সময় ধরে গেইম খেললে এই ডিভাইসটি সামান্য গরন হয়ে পড়ে। তবে তা খুবই কম এবং খুব তাড়াতাড়িই আবার ঠান্ডা হয়ে যায়। আর এর ফাস্ট ঠান্ডা হওয়ার কারণ ছিলো এর মধ্যে থাকা Liquid Cooling System যা খুব ভালোভাবে কাজ করছিল

তাই পরিশেষে বলা যায় এই ফোন থেকে গেইমিং পারফর্মেন্স একদম টপ নচ। এই বাজেটে এমন গেইমিং পারফর্মেন্স পাওয়াটা খুব ই ভালো লাগার ব্যাপার ছিলো

বাজেট বিবেচনায় তাই এই ফোন থেকেই সবচেয়ে ভালো গেইমিং করা সম্ভব।

Camera Performance-

সব ফোনেই ক্যামেরা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ফোনেরও ক্যামেরা পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো ছিল।

এর পিছনের দিকে রয়েছে Quad Camera যার –

  • Main Camera 48 MP এবং SONY IMX582 এর সেন্সর যা f/1.8 এর।
  • Video: এই ক্যামেরা দিয়ে সর্বোচ্চ 4K তে 30fps এ Video করা যাবে। রয়েছে EIS এর Stabilization।
  • তাছাড়া রয়েছে 8 MP এর 119° এর একটি Ultra wide সেন্সর যার f/2.2। 
  • এর রয়েছে 2 MP এর একটি Macro Camera যার f/2.4। 
  • তাছাড়াও 2 MP এর একটি Depth Camera যার f/2.4, এর সামনে punch Hole এ রয়েছে একটি সেলফি ক্যামেরা।
  • Front/Selfie Camera হিসেবে রয়েছে 20 MP এর f/2.2 এর ক্যামেরা। সেলফি ক্যামেরা দিয়ে সর্বোচ্চ 1080p তে 30fps এ ভিডিও করা যাবে।

এর তোলা ছবি দেখতে সুন্দর লাগলেও এই বাজেটের অন্যান্য ফোন বা এর ছোট ভাই POCO X3 এর সাথে তুলনা করলে তফাত টা বোঝা যায়। 

এই ডিভাইসের তোলা ছবিগুলো দেখলে মনে হবে অনেক details রয়েছে। তবে আসলে এর ছবিগুলো আসলে Over Processed। যার ফলে ছবিগুলো দেখতে Over Contrasted বা Over Sharped লাগে।  তবে ছবিগুলো ভালো না এমন নয়। ফেইসবুকে আপলোড দেওয়ার মত ছবি অবশ্যই পাওয়া যায়। আবার এর Ultra wide camera তে তোলা ছবিগুলোর মান বেশি ভালো। পাশাপাশি Night mode এ তোলা ছবিগুলোর মানও যথেষ্ট ভালো।  তাই সম্যকভাবে এর ক্যামেরা চালিয়ে দেওয়ার মতো। তবে এই বাজেট বিবেচনায় এর ক্যামেরাকে সেরা বলা যায় না। ক্যামেরা হিসাব করলে এটা একদম Average এবং এর চেয়ে ভালো ক্যামেরা এর ফোন অনেক রয়েছে এই বাজেটে।

 Look and Build-

এই ফোন দেখতে অনেকটাই POCO X3 এর মতোই৷ এর ক্যামেরা মডিউল টা গোল এবং এটিও পলিকার্বনেট এর তৈরী। এতে দেওয়া হয়েছে Hybrid Sim Card Slot যাতে 2 টি Sim বা 1 টি Sim & 1 টি Memory Card ব্যবহার করা যাবে। এতে আরো রয়েছে Stereo Speaker। তবে যাদের হাত ছোট, তারা বাদেও বাকিদের জন্যও এটি ১ হাত দিয়ে ব্যবহার করাটা কষ্টসাধ্য। কারণ ফোনটি একইসাথে বেশ ভারি, বেশ বড় এবং বেশ পুরু। তবে এতে ধীরেধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আরেকটি বিষয় রয়েছে। ফুল ভলিউমে কোনো ভিডিও প্লে করলে ফোনটির পেছনের অংশটা ভালোরকম ভাইব্রেট করে। 

Display-

এই ফোনে রয়েছে 6.67 inch এর Full HD+ এর একটি IPS Panel। পাশাপাশি এতে রয়েছে 120 Hz এর Refresh Rate যা আপনাকে একটি স্মুথ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিবে। 

তবে এটি ক্ষেত্রবিশেষ কিছু app এ কাজ করছিলো না। তবে ওভারঅল বেশ স্মুথ ফিল পাবেন

এতে রয়েছে Corning Gorilla Glass 6 এর প্রোটেকশন যা অবশ্যই একটি খুব ভালো ব্যপার এবং এটি আপনার ফোনকে বেশ শক্তভাবে প্রোটেকশন দিবে। আবার Direct Sunlight এ এর brightness আরেকটু বেশি হতে পারত।

Battery-

এতে রয়েছে 5160 mAh এর বিশাল ব্যাটারি। একে চার্জ দেওয়ার জন্য রয়েছে 33 Watt এর Fast Charging System। Heavy Use করলেও 7-8 ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। আর কারণ এতে ব্যবহৃত Dual Cell Battery Technology যেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। 

User Interface (UI)-

Xiaomi এর UI এ বেশ কিছু bug সম্পর্কিত এবং সমস্যার কথা আমরা সকলেই জানি। পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর Ad এর জ্বালাতন।  তবে POCO X3 Pro তে রয়েছে Android 11 & MIUI 12। এখানে ভালো ব্যপার হলো এই ফোনে 

Ad এর পরিমান খুবই কম ছিল। তবে একটা ভয় ভিতরে থেকেই যায় যে নেক্সট আপডেট এ আবার সমস্যার দেখা দিবে না তো? Xiaomi এর উচিত এ নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করা উচিত। 

সুতরাং সব শেষে এই ফোন কাদের জন্য বেস্ট হবে এই ব্যপারে আসা যাক। এই ফোন বিনা হিসাবে এই বাজেটে গেইমারদের জন্য বেস্ট ডিল হবে। অর্থ্যাৎ যাদের ভালো প্রসেসর দরকার তাদের জন্য এটি। আর যাদের একটু ভালো ক্যামেরা দরকার তাদের জন্য এই বাজেটে আরো অনেক ডিভাইস রয়েছে।

About the Author: Nazmul Hossain

আমি নাজমুল । আমি বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা তে বসবাস করি। বর্তমানে আমি চাকরী করছি। আমার চাকরী পাশাপাশি আমি অনলাইনে লেখা লেখি করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে টেকনোলোজি বিষয়ে লেখা লেখি করতে আমার ভাল লাগে। তাই আপনাদের জন্য আমি এই ওয়েবসাইট টি তৈরি করেছি। এখানে আপনি বাংলাদেশের অনালাইন সম্পর্কিত প্রায় সকল ধরনের তথ্য খুজে পাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *