দ্রুত চার্জ হয় এমন স্মার্টফোন এর তালিকা.
স্মার্টফোনে ফাস্ট চার্জিং আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ – এই নিয়ে প্রচুর যুক্তিতর্ক থাকলেও দ্রুত চার্জ হয় এমন স্মার্টফোন পছন্দ করেনা এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ফোন যত দ্রুত চার্জ হয়, তত দ্রুত তা ব্যবহারের উপযোগী হয়।
এই কারণে ফাস্ট চার্জিং বর্তমান স্মার্টফোন মার্কেটে একটি ফিচাররূপে দেখা হয়। স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো কে কার চেয়ে অধিক ফাস্ট চার্জিং ফিচার প্রদান করতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতার সুবিধা হিসেবে কনজ্যুমার এর কাছে সুলভ মূল্যে পৌছে যাচ্ছে ফাস্ট চার্জিং স্মার্টফোন।
এই পোস্টে জানতে পারবেন দ্রুত চার্জ হয় এমন সব ফোন সম্পর্কে। উল্লেখ্য যে এই পোস্টে শুধুমাত্র ফাস্ট চার্জিং ফোনসমূহের তালিকা দেওয়া রয়েছে, যার মানে তালিকার ফোনগুলো নির্বাচনের সময় ফাস্ট চার্জিংকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে
শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ – Xiaomi 11i Hypercharge
শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ ফোনটিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই। সুলভ মূল্যে ৫জি ও দুর্দান্ত ১২০ওয়াট ফাস্ট চার্জিং ফিচার অফার করছে ফোনটি। ফোনটির নামে থাকা “হাইপারচার্জ” টাইটেল দেখেই বুঝা যায় ফোনটির মূল আকর্ষণ এর ফাস্ট চার্জিং।
ফোনের বক্সে দেওয়া ১২০ওয়াট ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে ফোনটির ৪৫০০মিলিএম্প ব্যাটারি মাত্র ১৫মিনিটে শূন্য থেকে ফুল চার্জ করা যাবে বলে দাবি করছে শাওমি। মিডিয়াটেক এর ডাইমেনসিটি ৯২০ ৫জি প্রসেসর দ্বারা চালিত ফোনটিতে রয়েছে ৬.৬৮ইঞ্চির অ্যামোলেড স্ক্রিন, যা আবার ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড
পিছিয়ে নেই শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ ফোনটির ক্যামেরা সেকশন ও। ১০৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সরের পাশাপাশি ৮মেগাপিক্সেল এর আলট্রাওয়াইড সেন্সর ও ২মেগাপিক্সেলের ম্যাক্রো ক্যামেরা রয়েছে ফোনটিতে। সেল্ফি ক্যামেরা হিসেবে রয়েছে ১৬মেগাপিক্সেল সেল্ফি ক্যামেরা।
শাওমি মি ১০ আলট্রা – Xiaomi Mi 10 Ultra
শাওমির ১২০ওয়াট ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি প্রথম দেখা যায় শাওমি মি ১০ আলট্রা ফোনটিতে। তবে শাওমি মি ১০ আলট্রা এর ফাস্ট চার্জিং শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ এর মতো এত ফাস্ট নয়। শাওমি এর প্রদত্ত তথ্যমতে শাওমি মি ১০ আলট্রা এর ৪৫০০মিলিএম্প ব্যাটারি চার্জ হতে সময় লাগবে ২৩মিনিট।
শাওমি মি ১০ আলট্রা ফোনটির নামে থাকা “আলট্রা” শব্দের প্রতিফলন যাতে ফোনটির সকল ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হয়, তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট বদ্ধ পরিকর ছিলো শাওমি। একটি “আলট্রা” ফোন তৈরির লক্ষ্যে আলট্রা ডিসপ্লে থেকে শুরু করে আলট্রা চার্জিং পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি ফিচার এক্সট্রিম লেভেলের রাখা হয়েছে শাওমি মি ১০ আলট্রা ফোনটিতে
শুধুমাত্র মি ১০ আলট্রা ফোনটির ওয়্যারড চার্জিং নয়, এর ওয়্যারলেস চার্জিং ও বেশ ফাস্ট। ৫০ওয়াট এর ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে ফোনটি। ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির পাশাপাশি ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেটের ৬.৬৭ইঞ্চির ওলেড স্ক্রিন, কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ ও ৪৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরার মত ফিচার রয়েছে ফোনটিতে।
শাওমি মি ১১ আলট্রা – Xiaomi Mi 11 Ultra
শাওমির আরেকটি “আলট্রা” ফোন জায়গা করে নিয়েছে আমাদের এই ফাস্ট চার্জিং স্মার্টফোন এর তালিকায়। ৬৭ওয়াট ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে শাওমি মি ১১ আলট্রা ফোনটির ৫০০০মিলিএম্প ব্যাটারি ফুল চার্জ করা যাবে মাত্র ৩৬মিনিটের মধ্যে। ফোনটিতে আবার ৬৭ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট রয়েছে যার মাধ্যমে মাত্র ৪০মিনিটের মধ্যেই ফোনটি ফুল চার্জ সম্ভব।
ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো – OnePlus 9 Pro
ওয়ানপ্লাস এর ফ্ল্যাগশিপ, ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো রয়েছে আমাদের এই ফাস্ট চার্জিংস্মার্টফোন এর তালিকায়। ৬৫ওয়াট ওয়্যারড চার্জিং এর পাশাপাশি ৫০ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে ফোনটি। ৬৫ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে ফোনটির ৪৫০০মিলিএম্প এর ব্যাটারি ৩০মিনিটের মধ্যে শূন্য থেকে ফুল চার্জ সম্ভব। অন্যদিকে ওয়্যারলেস চার্জিং এর ক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে ৪৩মিনিটের মত।
৬.৭ইঞ্চির অ্যামোলেড স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো তে, যা আবার ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি প্রসেসর দ্বারা চালিত এই ফোনটিতে রয়েছে ৪৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ, যার মধ্যে ৪৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর এর পাশাপাশি রয়েছে ৫০মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ও ৮মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা।
হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো – Huawei P50 Pro
৬৭ওয়াট ফাস্ট চার্জার এর ফোন, হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো এর মাধ্যমে ফাস্ট চার্জিং ফোনের এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে হুয়াওয়ে। ৬.৬ইঞ্চির ওলেড ডিসপ্লে ও ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লের এই ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৪জি প্রসেসর। ৪৩৬০মিলিএম্প ব্যাটারির ফোন, হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো ৬৬ওয়াট ফাস্ট চার্জার সাপোর্টেড। আবার ৫০ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং ও সাপোর্ট করে ফোনটি
ফোনটিতে থাকা কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ৫০মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরার পাশাপাশি ফোনটিতে রয়েছে ৬৪মেগাপিক্সেল পেরিস্কোপ টেলিফটো ক্যামেরা, ১৩মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা ও আরো একটি ৪০মেগাপিক্সেল সেন্সর। অর্থাৎ ক্যামেরা সেকশনে বাজারের সেরা ক্যামেরা ফোনগুলোর সাথে সমানে প্রতিযোগিতায় নেমেছে হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো ডিভাইসটি।
শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো – Redmi Note 11 Pro
শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো ফোনটিতে থাকা ৫০০০মিলিএম্প এর বিশাল ব্যাটারি এর বক্সে থাকা ৬৭ওয়াট ফাস্ট চার্জার দ্বারা মাত্র ৩০মিনিটের মধ্যে শূন্য থেকে ফুল চার্জ সম্ভব। শুধুমাত্র ফাস্ট চার্জিং এই ফোনটির একমাত্র আকর্ষণ নয়। ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেটের ৬.৬৭ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে রয়েছে রেডমি নোট ১১ প্রো ফোনটিতে।
রেডমি নোট ১১ প্রো ফোনটি চলবে মিডিয়াটেক এর হেলিও জি৯৬ প্রসেসর দ্বারা। ১০৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ রয়েছে ফোনটিতে৷ কোয়াড ক্যামেরা সেটাপের মধ্যে একটি ১০৮মেগাপিক্সেল সেন্সর ও ৮মেগাপিক্সেল এর আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরার দিক দিয়ে তালিকার অন্য ফোন রিয়েলমি ৮ প্রো এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো।
অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো – Oppo Find X3 Pro
ফাস্ট চার্জিং ফোনসমূহের মধ্যে অপো এর ফ্ল্যাগশিপ, অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো ফোনটি একটি। ৪৫০০মিলিএম্প ব্যাটারির এই ফোনটিকে বক্সে দেওয়া ৬৫ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার দ্বারা ৩০মিনিটের কম সময়ের মধ্যে শূন্য থেকে ১০০% চার্জ করা সম্ভব। আবার ৩০ওয়াট ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং দ্বারা ফোনটি ৮০মিনিটে ফুল চার্জ করা যাবে।
অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো ফোনটিতে প্রসেসর হিসেবে থাকছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি চিপসেট। ৬.৭ইঞ্চির অ্যামোলেড ডিসপ্লের এই ফোনটি ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। অপো’র “ক্যামেরা ফোন” স্লোগানের অংশ হিসেবে এই ফোনের মূল আকর্ষণ হলো ৫০মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ।
রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো – Realme X50 Pro
সম্প্রতি ফাস্ট চার্জিংকে বেশ সিরিয়াসলি নিচ্ছে রিয়েলমিম। এর অংশ হিসেবে রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো ফোনটিতে দেখা মিলবে ৬৫ওয়াট ফাস্ট চার্জিং এর। রিয়েলমি এর দাবি মাত্র ৩৫মিনিটে রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো এর ৪২০০মিলিএম্প এর ব্যাটারি ফুল চার্জ করা যাবে।
রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো ফোনটিতে প্রসেসর হিসেবে থাকছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ ৫জি চিপসেট। ফোনটির ৬.৪৪ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে ৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো ফোনটিতে ৬৪মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ রয়েছে।
রিয়েলমি ৮ প্রো – Realme 8 Pro
রিয়েলমি ৮ প্রো ফোনটি বিভিন্ন কারণে বাজারে সাড়া ফেলেছে বিশ্বব্যাপী। আর এই ফোনটি এতো জনপ্রিয় হওয়ার একটি অন্যতম কারণ এর ফাস্ট চার্জিং। রিয়েলমি ৮ প্রো ফোনটিতে থাকা ৪৫০০মিলিএম্প এর ব্যাটারি ফোনের বক্সে দেওয়া ৫০ওয়াট চার্জার দ্বারা ৫০মিনিটের কম সময়ের মধ্যে শূন্য থেকে ফুল চার্জ করা সম্ভব।
সম্ভব।
রিয়েলমি ৮ প্রো ফোনটিতে রয়েছে ৬.৪ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে। ফোনটি চলবে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৭২০জি প্রসেসর দ্বারা। ১০৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ রয়েছে ফোনটিতে, যার মধ্যে একটি ১০৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর, একটি ৮মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা, বাকি দুইটি ২মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো ক্যামেরা ও ডেপথ সেস্নর। ফাস্ট চার্জিং এর পাশাপাশি দারুণ ক্যামেরা যাদের পছন্দ, এই ফোনটি তাদের হতাশ করবেনা।
ভিভো ভি২৩ প্রো – Vivo V23 Pro
ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানটির ফোন ফাস্ট চার্জিং ফোনের তালিকায় থাকবে না, তা কি হতে পারে? কথা বলছি ভিভো কে নিয়ে। ভিভো ভি২৩ প্রো ফোনটি স্থান করে নিয়েছে দ্রুত চার্জ হয় এমন ফোনের তালিকায়।
👉 রিয়েলমি সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য
ভিভো ভি২৩ প্রো ফোনটিতে ব্যাটারি রয়েছে ৪৩০০মিলিএম্প এর। এই ফোনটি ফোনের বক্সে থাকা ফাস্ট চার্জার দিয়ে শূন্য থেকে ৬৩% চার্জ করা যাবে মাত্র ৩০মিনিট সময়ের মধ্যে। অর্থাৎ এক ঘন্টার কম সময়ে ফোনটি শূন্য থেকে ফুল চার্জ করা যাবে। ৯০হার্জ অ্যামোলেড স্ক্রিনের এই ফোনটি চলবে মিডিয়াটেক এর ডাইমেনসিটি ১২০০ ৫জি প্রসেসর দ্বারা।
ভিভো’র অন্য ফোনগুলোর মত ভিভো ভি২৩ প্রো ফোনটিতেও প্রধান ফোকাস এর ক্যামেরা সেকশন। ট্রিপল ব্যাক ক্যামেরা সেটাপের এই ফোনটিতে রয়েছে ১০৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর, ৮মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা ও ২মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো সেন্সর। ফোনটির ফ্রন্টে রয়েছে দুইটি ক্যামেরা, যার মধ্যে একটি ৫০মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর ও অপরটি ৮মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা।
উল্লেখিত দ্রুত চার্জ হয় এমন স্মার্টফোনের তালিকা হতে আপনার পছন্দের ফোন কোনটি? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।