ই-সিম কি? eSIM ব্যবহারের সুবিধা কি? সকল নেটওয়ার্ক কি ই-সিম সাপোর্ট করে
সম্প্রতি বাংলাদেশে ই-সিম সেবা চালু হয়েছে। আজকে গ্রামীণফোন সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এই সেবা চালু করে। ই-সিম হল এমন একটা প্রযুক্তি যেটা খুবই ছোট হয় এবং এটা আপনার ডিভাইসের ভেতরে হার্ডওয়ার এর সাথে সংযুক্ত থাকে।
আমরা কোনো কোম্পানির মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে গেলে সেই কোম্পানির সিম ব্যবহার করতে হয়। অন্যথায় আমরা ওই নাম্বারটা ব্যবহার করতে পারি না। যার ফলে একজন ব্যক্তি যদি একাধিক নাম্বার ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে তার বারবার সিম খুলে পরিবর্তন করতে হয়।
এই ঝামেলাটা দূর করার জন্য প্রযুক্তিবিদরা বা ইঞ্জিনিয়াররা ই-সিম নামক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল কোম্পানিগুলো আপনাকে একটা ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড বা কিউ-আর কোড দিবে যেটার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে কোন সিম পরিবর্তন ছাড়াই আপনার নম্বর যেকোনো সময় পরিবর্তন করতে পারবেন। মানে যখন যে নাম্বারটা চালাতে মনে চাইবে, তখন সেই নাম্বারটার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে চালাতে পারবেন।
এতে করে মোবাইলটা বার বার খোলা লাগবেনা।
তবে এটার অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন বর্তমানে আপনারা জানেন সাইবার অ্যাটাক গুলো খুব বেশি হচ্ছে। যার কারণে কেউ যদি আপনার লগইন সিস্টেম হ্যাক করে তাহলে আপনার সিম যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। যার ফলে একজনের প্রাইভেসির অনেক ক্ষতি হতে পারে।
তবে প্রযুক্তিবিদ্যায় এই বিষয় নিয়ে আরো অনেক রিচার্জ করছে। ভবিষ্যতে ই-সিম প্রতিটা দেশেই ব্যবহৃত হবে।
সিম কার্ড কি?
ই-সিম কার্ড এর কার্যক্রম ভালোভাবে বুঝতে হলে আগে প্রচলিত সিম কার্ড সম্পর্কে জানতে হবে। একটি সিম সাধারণত ফোনের একটি স্পেশাল ট্রে তে ইনসার্ট করা থাকে। মূলত কোনো ক্যারিয়ার বা অপারেটর এটি সরবরাহ করে। এটি একটি ডিভাইসের ইউনিক সিরিয়াল নাম্বার, আইএমইআই, আইসিসিআইডি, অথেনটিকেশন কি, ডিভাইস পিন, এসএমএস, ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করে।
সিম কার্ড সাধারণত ছোট একটি প্লাস্টিকের কার্ড, যার এক কোণায় নচ থাকে। এছাড়াও একটি সোনালী দেখতে সার্কিট থাকে সিম কার্ডে যা মূলত সিমের মাদারবোর্ড ও এটি গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য বহন করে। প্রতিটি সিমের একটি নাম্বার থাকে, যা রবি, জিপি এর মত ক্যারিয়ারসমূহ প্রদান করে। সিম এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ব্যবহার সম্ভব।
ই-সিম কি?
সিম কি ও কিভাবে কাজ করে এর ধারণা তো আমরা জানলাম। এবার প্রশ্ন হচ্ছে ই-সিম কি? ই-সিম হলো এক নতুন ধরনের সিম প্রযুক্তি, যা প্রচলিত সিম ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে সক্ষম। তবে সিম এর মত ই-সিম রিমুভ করা যায়না, বা অন্য ফোনে প্রবেশ করানো যায়না। এটি সরাসরি ফোনের মধ্যে এমবেডেড, অর্থাৎ যুক্ত থাকে।
ই-সিম এর মধ্যে থাকা তথ্য রি-রাইটেবল, অর্থাৎ পরিবর্তনযোগ্য। এর অর্থ হলো সিম পরিবর্তন করা ছাড়া বা নতুন সিম ব্যবহার ছাড়াই অপারেটর পরিবর্তন করা যাবে ই-সিম ব্যবহার করে। ই-সিমের এমন সুবিধার ফলে অদূর ভবিষ্যতে প্রচলিত সিমের প্রয়োজন থাকবেনা। বর্তমানে ডুয়াল-সিম ফোনসমূহে অনেক ক্ষেত্রে সেকেন্ড সিম হিসেবে ই-সিম এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।
ই-সিম এর সুবিধাসমূহ
ই-সিম এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর ফলে বেশ সহজে নেটওয়ার্ক অর্থাৎ মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন সম্ভব। অপারেটর পরিবর্তন করতে নতুন একটি সিম কিনে সেটি ফোনে প্রবেশ করানোর কোনো প্রয়োজন হয়না। ই-সিম এর ক্ষেত্রে সিম ইজেক্টর টুল দিয়ে সিম রিমুভ করে নতুন সিম ব্যবহার করতে হচ্ছেনা।
ই-সিম ব্যবহার করে এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে বেশ সহজে সুইচ করা যাবে। একটি ই-সিমে একই সাথে কমবেশি ৫টি ভার্চুয়াল সিম কার্ড এর তথ্য সংরক্ষণ সম্ভব। এর মানে হলো নেটওয়ার্ক সিগনাল নেই এমন এলাকায় গেলে সকল সিম থেকে যে সিমের নেটওয়ার্ক আছে, সে সিম ব্যবহার করা যাবে ই-সিম এর কল্যাণে।
এক স্লটে একাধিক সিম ব্যবহারের পাশাপাশি ডুয়াল-সিম ফোনসমূহে ই-সিম এর সাথে চিরাচরিত সিম ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ একই ফোনে একাধিক ফোন নাম্বার ব্যবহারের সুবিধা থাকছে ই-সিম ব্যবহার করলেও। ব্যক্তিগত যোগাযোগে একটি ফোন নাম্বার ও ব্যবসায়িক কাজে আলাদা একটি নাম্বার ব্যবহার করতে চাইলে এমন পরিস্থিতিতে বেশ কাজে আসতে পারে ই-সিম।
আবার সাধারণ সিম এর চেয়ে ই-সিম আকারে বেশ ছোটো, যার ফলে ফোনে বাড়তি ফিজিক্যাল স্পেস পাওয়া যায়, আর এই স্পেস স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারারগুলো ব্যাটারি সাইজ বাড়াতে বা নতুন ফিচার যুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও ফোনে যত হোল কম থাকবে, ফোন ধুলাবালি থেকে তত বেশি সুরক্ষিত থাকবে।
স্মার্টফোনের সাইজ কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্মার্টওয়াচ এর মতো ছোটো আকারের ডিভাইসসমূহে ই-সিম এর ব্যবহার বেশ সুবিধাজনক হতে পারে। ইতিমধ্যে অ্যাপল তাদের স্মার্টওয়াচ এর বিভিন্ন সিরিজে ই-সিম যুক্ত করেছে। স্যামসাং তাদের স্যামসাং গিয়ার এস২ ও স্যামসাং গিয়ার এস৩ স্মার্টওয়াচে যুক্ত করেছে ই-সিম।
ই-সিম এর অসুবিধাসমূহ
সকল বিষয়ের সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা ও রয়েছে। ই-সিম ও তার ব্যতিক্রম নয়। ই-সিম এর কিছু ডাউনসাইড রয়েছে, যার কারণে এই প্রযুক্তি এখনো মেইনস্ট্রিম হয়নি।
প্রথমত শুনতে বেশ সহজ মনে হলেও ই-সিম ব্যবহার করে ডিভাইস সুইচ করা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া। সাধারণ সিমের ক্ষেত্রে ফোন কোনো কারণে কাজ না করলে সিম বের করে তা অন্য ফোনে ইনসার্ট করলে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমনঃ ফোন নাম্বার উদ্ধার করা যায়। কিন্তু ফোনের কোনো সমস্যা হলে ই-সিম থেকে তথ্য উদ্ধার করা তেমন সহজ নয়।
আপনার গতিবিধি সিম এর সাহায্যে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে, এমন সন্দেহ হলে বেশ সহজে সাধারণ সিম খুলে ফেলা যায়। কিন্তু ই-সিম এর ক্ষেত্রে এমন কোনো সুবিধা নেই। তবে ফোন চুরি হয়ে গেলে ছিনতাইকারীরা কোনো তথ্য মুছতে পারবেনা, এটি একটি ভালো দিক বলা যেতে পারে।
ই-সিম আছে যেসব ফোনে
বর্তমানে কিছু নির্দিষ্ট স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচে দেখা মিলবে ই-সিম এর। এসব ডিভাইসসমূহ হলোঃ
- আইফোন ১৩ সিরিজ, আইফোন ১২সিরিজ, আইফোন ১০আর, আইফোন ১০এস ও আইপ্যাড প্রো
- স্যামসাং এর গ্যালাক্সি এস২১ সিরিজ, এস২০ সিরিজ
- গুগলের গুগল পিক্সেল ৬ সিরিজ, পিক্সেল ৫ সিরিজ, পিক্সেল ৪ সিরিজ, পিক্সেল ৩ সিরিজ
- মটোরোলা রেজার (কোনো সিম ট্রে নেই, শুধু ই-সিম রয়েছে)
- স্যামসাং গিয়ার ডিভাইসসমূহ
- অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৬, সিরিজ ৫, সিরিজ ৪, সিরিজ ৩
সকল নেটওয়ার্ক কি ই-সিম সাপোর্ট করে?
না, বর্তমানে সকল নেটওয়ার্ক ই-সিম সাপোর্ট করেনা। তবে এই প্রযুক্তি বেশ কিছুদিনের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়াবে।বাংলাদেশে ই-সিম সুবিধা রয়েছে?
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো টেলিকম অপারেটর ইসিম দিচ্ছেনা। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে চলে আসবে।